উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অন্যতম ভোটব্যাঙ্ক ঠাকুর সম্প্রদায়। যে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই ঠাকুর সম্প্রদায়েরই অন্যতম প্রভাবশালী নেতা কুলদীপ সেঙ্গার। দেখা গেছে, উন্নাওয়ের ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেঙ্গার যে দলের থেকেই ভোটে লড়ুন না কেন, ঠিক জিতে যান৷ তিনি হলেন আয়ারাম-গয়ারাম নেতাদের উপযুক্ত প্রতিনিধি, যিনি ২০০২ ও ২০০৭-এ বহুজন সমাজ পার্টির হয়ে জিতেছেন। পরের বার অর্থাৎ, ২০১২-তে জিতেছেন সমাজবাদী পার্টির হয়ে এবং ২০১৭-র ভোটে তিনি বিজেপির হয়ে জিতে এসেছেন৷ এমনই হেভিওয়েট নেতা তথা চার বারের বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে কি সত্যিই বহিষ্কার করেছে বিজেপি? এ নিয়ে এখনও ধাঁধায় গোটা দেশ।
প্রসঙ্গত, গত বছর সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরেও যোগী আদিত্যনাথের সরকার উন্নাও সদরের বিধায়ক সেঙ্গারের বিরুদ্ধে প্রথমে কোনও পদক্ষেপ করেনি। বরং নিগৃহীতা অভিযোগ জানানোর পরের দিনই তাঁর বাবাকে প্রচণ্ড মারধর করেন বিধায়কের ভাই। নিগৃহীতার বাবা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখার পুরনো একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার এবং মারধর করে পুলিশ। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এখানেই শেষ নয়, নিগৃহীতার কাকাকেও এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়। যোগীর পুলিশ এর পরে রেল ডাকাতি, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণের চেষ্টার মতো ১২টি মামলায় জড়ায় তাঁকে। এর থেকেই স্পষ্ট যে কানুনের মতো সেঙ্গারের হাতও কম লম্বা নয়।
যদিও বিরোধীদের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় যোগী সরকার। প্রাথমিক তদন্তের পরে সিবিআই আদালতে জানায়— ২০১৭-র ৪ জুন সেঙ্গার ও তার দলবল যে তরুণীকে ধর্ষণ করেছে, তার প্রমাণ মিলেছে। এরপরেও কিন্তু বিজেপি সেঙ্গারকে বহিষ্কার বা সাসপেন্ডের কোনও ঘোষণা করেনি। বুধবার যেমন বিজেপির উত্তরপ্রদেশের সভাপতি স্বতন্ত্রদেব সিংহ দাবি করেন, দল আগেই সেঙ্গারকে সাসপেন্ড করেছিল। তবেসেটা তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে হওয়ায় দিনক্ষণ বলতে পারছেন না। কিন্তু এরপরেই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট উন্নাও নিয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ দেওয়ায় বিরোধীরাও শোরগোল ফেলে দেন।
যার ফলে গতকাল সন্ধ্যায় স্বতন্ত্রদেব প্রথমে মুখে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কুলদীপ সেঙ্গারকে বহিষ্কার করেছে বলে শুনেছি।’ পরে রাতে একই কথা তিনি লিখিত জানান। তবে এরপরও কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও ঘোষণা করেননি। প্রশ্ন উঠছে, সেঙ্গারকে বহিষ্কারের কথা জানাতে কেন এত ভাবতে হচ্ছে অমিত শাহকে? আসলে, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে এখনও দুটো বিষয় খুব মূল্যবান৷ সেটা হল, জাতপাত ও পেশিশক্তির জোর৷ যে রাজনীতিকের কাছে এই জোর যত বেশি, তিনি তত বেপরোয়া৷ সেঙ্গার হলেন জাতিতে রাজপুত বা ঠাকুর৷ আর ঠাকুরদের মধ্যে একটা অসাধারণ ঐক্য আছে৷ নিজের জাতের রাজনীতিক, তা তিনি যে দলেই থাকুন না কেন, রাজপুত নেতারা সচরাচর তাঁকে ভরপুর সাহায্য করে থাকেন৷
কাকতালীয় হলেও এটা ঘটনা, যে থানায় ধর্ষিতা অভিযোগ করেছিলেন, তার ওসি থেকে শুরু করে রাজ্যের পুলিশ প্রধান পর্যন্ত সকলেই রাজপুত৷ এটাও ঘটনা যে, ঠাকুররা বিজেপির সবথেকে বড় সমর্থক৷ দ্বিতীয় জোর হল, সেঙ্গারের জনভিত্তি৷ তিনি নিজে গত ১৭ বছর ধরে বিধায়ক থাকার পাশাপাশি তাঁর পরিবারের কেউ না কেউও গত ৫০ বছর ধরে ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও না কোনও পদে আছে৷ যার ফলে উত্তরপ্রদেশে তাঁর পরিচয় দাবাং নেতা হিসাবে৷ এই সব কারণেই মুখ পুড়লেও মেপে পা ফেলতে হচ্ছে শাহদের। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এখনও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই বিধায়কের বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়নি।