উন্নাও, কাঠুয়া, আলিগড়, মুজফফরনগরে দুই বোনকে গণধর্ষণ, উত্তরপ্রদেশে এক বোবা কালা তরুণীকে গণধর্ষণ… তালিকা শেষ হওয়ার নয়। প্রতিদিন এরকম বহু নির্মম নৃশংস ঘটনার খবর কানে আসে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলি ঘটে উত্তরপ্রদেশে। শিশুধর্ষণের যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তাতে শীর্ষে আছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে গত ছ’মাসে ৩,৪৫৭টি শিশুধর্ষণ ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশের পরেই আছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান আর মহারাষ্ট্র।
কিছুদিন আগেই শিরোনামে এসেছিল আরও এক বীভৎসতার খবর। দিল্লীতে পথের ধারে আবর্জনার গাদায় সাত বছরের এক মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়। শিশুটি ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তেলঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলের হানামকোন্ডায় নয় মাসের এক শিশুকন্যাকে অপহরণ করে তাকে ধর্ষণ করে টুঁটি টিপে খুন করার অভিযোগ উঠেছে মদ্যপ এক যুবকের বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোট চলাকালীন হিমাচলপ্রদেশের কুলু এলাকার এক পোলিং বুথের কাছে এক লম্পটের লালসার শিকার হয় ন’বছরের এক মেয়ে। এ তো মাত্র কয়েকটি উদাহরণ। ধর্ষণের শিকার সবচেয়ে বেশি সাত থেকে বারো বছর বয়সি বাচ্চারা। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে, শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ঘরের ভেতরে, আপনজনদের মাধ্যমে। প্রায় প্রতি দিন। শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে ঘটনার বীভৎসতার গভীরতা মাপা যাবে না।
শিশু নিগ্রহের এই চিত্র যেন বিজেপির উদাসীনতাকে আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতকে ক্যাশলেশ করতে চান, করতে চান ডিজিটাল ইন্ডিয়া অথচ এই ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে যে মেয়েরা এতটুকু সুরক্ষিত নন, সেইদিকে এতটুকুও নজর দেন না, তা আবার প্রমাণিত।
মোদী বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের ঘটা করে সূচনা তো করেছেন কিন্তু এই ছোট ছোট বেটিরা যে বিনাশ হচ্ছে অকালেই সেদিকে কি নজর আছে তাঁর? নেই হয়ত। তাঁর জন্যেই তাঁর গড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ায় মানুষরুপী রাক্ষসেরা যারা স্টেশন থেকে ঘুমন্ত শিশুকে, বাড়ির সামনে খেলা করা এক আড়াই বছরের ছোট্ট মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করতে দু’বার ভাবে না। আর শুধু ধর্ষণ তো নয়! চলে নারকীয় অত্যাচার। কোথাও মুন্ডু কেটে ছুঁড়ে ফেলা হয়, কোথাও হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। আবার কোথাও বা ধর্ষিতার মা-বাবাকেই হেনস্থার শিকার হতে হয়। আর বিচার? না! আইনি জাঁতাকলে মামলা চলে বছরের পর বছর।
সম্প্রতি পাশ হওয়া পকসো বিলকে স্বাগত জানিয়েও একটা কথা বলতে হয়। শিশুধর্ষণ রোধে কড়া শাস্তির দাবি সঙ্গত ঠিকই। কিন্তু শাস্তিতেই কি এই ব্যাপ্ত সামাজিক বিকার ঘুচবে? এ দেশে শিশুধর্ষণ রোধে গরু পুজোর কথাও শোনা গেল সম্প্রতি— তেলঙ্গানার হায়দ্রাবাদে চিলকুর বালাজি মন্দিরে। আজব এই দুনিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে ডিজিটাল ইন্ডিয়া আসলে কী দিয়ে তৈরি। সংখ্যা দিয়ে সভ্যতার অনেক সূচকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যত ক্ষণ না এ ধরনের সামাজিক রোগের নিরাময় হচ্ছে, তত ক্ষণ আমরা নিজেদের সভ্য দাবি করতে পারি না। শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রথম কাজ। কিন্তু রাষ্ট্র যে মত্ত নিজের আখের গোছাতে…