গতকাল নেত্রাবতী নদীর তীর থেকে সিসিডি-র কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই দানা বেঁধেছে রহস্য। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা হিসেবে অনুমান করা হলেও রহস্য থাকছেই। তাঁর লেখা শেষ চিঠিতে তাঁর কোম্পানির কর্মীদের উদ্দেশে লিখে যাওয়া চিঠিতে আয়কর দফতরের হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন সিদ্ধার্থ। এ দিন তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে নরেন্দ্র মোদী জমানায় ‘আয়কর সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হয়েছে শিল্পমহল ও বিরোধী দলগুলি।
সিদ্ধার্থকে টুইটারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শিল্পমহলের অনেকে। সেইসঙ্গে আয়কর দফতরকে নিশানা করেছেন তাঁরা। বাজেটে অতি-ধনীদের উপর আয়করের বাড়তি বোঝা চাপায় শিল্পপতিরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ বার সেই ক্ষোভের আগুনেই ঘৃতাহুতি পড়ল। বায়োকন-এর চেয়ারপার্সন কিরণ মজুমদার শ’-এর অভিযোগ, ‘‘বহু সংস্থাই এ ভাবে আয়কর দফতর, ইডি-র তদন্তের মোকাবিলা করছে।’’ মণিপাল গ্লোবালের চেয়ারম্যান মোহনদাস পাইয়ের যুক্তি, অফিসারদের হাতে গ্রেফতারির ক্ষমতা দিলে তার অপব্যবহার হবেই। গ্রেফতারিতে আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা উচিত।
শুধু শিল্পমহল নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কংগ্রেস নেতৃত্ব আয়কর দফতর, ইডি-র মতো সংস্থার হাতে শিল্পপতিদের হেনস্থার জন্য মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। মমতা বলেন, ‘‘ভি জি সিদ্ধার্থ যা বলে গিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার হেনস্থা ও চাপের মুখে উনি খুবই বিষণ্ণ ছিলেন। ওই হেনস্থা ও চাপের জন্যই তিনি শান্তিপূর্ণ ভাবে ব্যবসা করতে পারছিলেন না। এই চাপ উনি নিতে পারেননি।’’ মমতার মতে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যেমন ঘোড়া কেনাবেচা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে হেনস্থার জন্য ভীত, তেমনই শিল্পমহলও চাপের মুখে।
লোকসভায় এ নিয়ে সরব হন কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি। তাঁর দাবি, ‘‘সিদ্ধার্থ আত্মহত্যা করেছেন কি না তার যেমন তদন্ত দরকার, তেমনই আত্মহত্যার কারণ আয়কর দফতরের আধিকারিকদের হেনস্থা কি না, তা নিয়েও সরকারকে তদন্ত করতে হবে।’’ কর্নাটক কংগ্রেস দাবি করে, আয়কর দফতরের হেনস্থার ফলেই সিদ্ধার্থের মৃত্যু হয়েছে। কর্নাটক বিজেপি পাল্টা দাবি করে, ‘সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক শকুন’-রা সিদ্ধার্থের পরিবারের আবেগের কথা না ভেবেই আসরে নেমেছে।
প্রসঙ্গত, সিদ্ধার্থের অভিযোগ ছিল, আয়কর দফতরের প্রাক্তন ডিজি তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইন্ডট্রি-র শেয়ার বেচা আটকাতে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেন। পাওনা আদায় করতে সিসিডি-র শেয়ারও দখল করা হয়। সে কারণেই তিনি আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েন। আয়কর দফতরের অবশ্য দাবি, সিদ্ধার্থ নিজেই তদন্তে উদ্ধার কালো টাকার কথা স্বীকার করেন।