১৭ তম লোকসভার প্রথম অধিবেশন বসা ইস্তক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে প্রায় রোজই কোনও না কোনও বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার যে ট্রেন্ড শুরু করেছে কেন্দ্র, শুরু থেকেই তার বিরোধীতায় সরব বিরোধীরা। তবে গত শুক্রবার রাজ্যসভায় তথ্যের অধিকার সংশোধনী বিলটি পাশ করার সময়েই বিরোধী দাপট কমতে দেখা যায়। আর তার চার দিনের মধ্যেই মঙ্গলবার তিন তালাক বিলটি যে ভাবে পাশ করিয়ে নিল মোদী সরকার, তাতে স্পষ্ট যে বিজেপির প্রবল চাপের মুখে ভেঙে পড়ছে বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধী দলের প্রতিরোধ।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, সিবিআই এবং ইডি-কে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলিকে সমঝোতার রাস্তায় আনতে কার্যত বাধ্য করছে মোদী সরকার। বিলগুলিকে সংসদীয় কমিটিতে না পাঠিয়ে ঝড়ের বেগে পাশ করানো নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও, নিজেদের মান ও অস্তিত্ব বাঁচাতে বিল পাশের সময় ভোটাভুটিতে অংশ না নিয়ে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাত শক্ত করছে এসপি, বিএসপি, এনসিপি, টিডিপি, টিআরএস-এর মতো দলগুলি।
যে কারণে কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ এবং তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, পরশু অনেক রাতে রাজ্যসভার পূর্বনির্ধারিত সূচী বদলে তিন তালাক বিল আনা হয় এবং গোপনে বিজেপি দলের সবাইকে হুইপ দিয়ে রেখেছিল। কংগ্রেসের বক্তব্য, তারা সেই সুযোগই পায়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি-বিরোধী অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সাংসদদের বড় অংশের অনুপস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, সিবিআই এবং ইডির জোড়া চাপ কী ভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছে তাঁদের।
যেমন বিএসপির ৪ জনই, এসপির ১২ জনের মধ্যে ৭ জন, এনসিপির ৪ জনের মধ্যে ২ জন অনুপস্থিত ছিলেন। তিন তালাক বিল নিয়ে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি আবেগঘন বক্তৃতা দেওয়ার পরেও তাঁর দুই রাজ্যসভা সাংসদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। অন্যদিকে, জানা গেছে, টিডিপির চার রাজ্যসভার সাংসদ বিজেপি তে চলে যাওয়ার পরে বাকি দু’জনও তলে তলে বিজেপির হয়েই কাজ করছেন। গত কাল ভোটাভুটির সময়ে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি!
উল্লেখ্য, তিন তালাক নিয়ে ভোটের আগে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেছিলেন, ‘সরকারের পক্ষে থাকবেন ১০০ জন। বিপক্ষ পাবে ৮৪।’ এই সংখ্যা প্রায় কাঁটায় কাঁটায় মিলে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, আগে থেকে ‘নিশ্চিত’ না থাকলে কী করে সঠিক সংখ্যাটা বলে দেওয়া যায়!