দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। এবং তা করতে গিয়ে প্রথমেই দেশে রেলের ১৪টি ছাপাখানার মধ্যে অবশিষ্ট থাকা পাঁচটি বড় ছাপাখানাও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। আর এবার রেলের যাবতীয় পার্সেল সামলানোর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হতে পারে একটি অতি পরিচিত বেসরকারি বহুজাতিক ডেলিভারি সংস্থার হাতে। মোদী সরকারের এই পরিকল্পনার জেরে কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন ট্রেনের পার্সেল ওয়াগনে মালপত্র তোলা এবং নামানোর কাজে যুক্ত থাকা কয়েক হাজার রেলকর্মী।
রেল মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শিয়ালদহ রাজধানী এবং মুম্বই রাজধানী এক্সপ্রেসে পরীক্ষামূলকভাবে ওই বেসরকারি বহুজাতিক ডেলিভারি সংস্থার হাতে ট্রেনের পার্সেলের দায়িত্ব ইতিমধ্যেই সঁপে দেওয়া হয়েছে। রেল সূত্রের খবর, আগামী এক মাস পর গোটা কাজের ওপর সমীক্ষা চালানো হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হবে রেল মন্ত্রকের এহেন উদ্যোগ কতটা সফল হয়েছে। তা খতিয়ে দেখার পরেই ভবিষ্যতে যাবতীয় দূরপাল্লার মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেনে ওই ব্যবস্থা কার্যকর করার পথে হাঁটবে রেল।
প্রসঙ্গত, এলএইচবি কোচের রাজধানী এক্সপ্রেসে দুটো পার্সেল ওয়াগন থাকে। এটি থাকে সংশ্লিষ্ট এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ডের কামরার সঙ্গে সংযুক্ত। এই দুটো পার্সেল ওয়াগনে মোট চার টনের মালপত্র ওঠানোর জায়গা থাকে। রেলমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইলট প্রজেক্টে মোট পার্সেলের মাত্র দেড় টনের দায়িত্ব রেল নিজের হাতে রেখেছে। বাকি আড়াই টন পার্সেলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি ওই বহুজাতিক ডেলিভারি সংস্থার হাতে। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে দুটো পার্সেল ওয়াগনের একটি কোনও ঠিকাদার সংস্থাকে ‘লিজ’ দেওয়া থাকে। অন্যটি থাকে রেলের জিম্মায়। এরই দায়িত্ব এবার ছেড়ে দিতে চাইছে তারা।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ট্রেনে বেসরকারি কোনও সংস্থার হাতে পার্সেলের দায়িত্ব থাকাকালীন যদি পার্সেল ওয়াগন থেকে কারও কোনও মালপত্র খোয়া যায়, তাহলে তার দায়ভার কে নেবে? রেল? নাকি সেই বেসরকারি সংস্থা? গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে পুরোমাত্রায়। সবথেকে বড় কথা, আশঙ্কা সত্যি করে যদি মাল ওঠানো-নামানোর সঙ্গে যুক্ত কয়েকশো হাজার কর্মী কর্মচ্যুত হন, তাহলে তাঁদের জন্য আদৌ কি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছে রেল? এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।