বাংলা জুড়ে তৃণমূলনেত্রীর ‘দিদিকে বলো’ ঘোষণার পরেই আম জনতার মনে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছিল। শাসক দলের মন্ত্রী-বিধায়কেরা সাধারণ মানুষকে এই মাধ্যম ব্যবহারে উৎসাহিত করে তুলতে রাস্তায় নামলেন। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা, কলকাতা থেকে কোচবিহার, তৃণমূলের বহু মন্ত্রী-বিধায়ক ও জেলার নেতারা দলের দেওয়া টি-শার্ট পরে সাংবাদিক বৈঠক ও জনসংযোগ করেন। নতুন জনসংযোগ ব্যবস্থায় সাড়া দিয়ে টেলিফোন ও পোর্টালে নাগরিকেরা যে সব আবেদন জানাচ্ছেন, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে ‘দিদিকে বলো’ ফেসবুক পেজ থেকে। সেখানে পুরোদস্তুর চিঠি লেখার কায়দায় তৃণমূলনেত্রীর কাছে গোছা গোছা আর্জি ও আবেদন জানাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। কেউ জানিয়েছেন ব্যক্তিগত সমস্যার কথা, কারও আর্জি বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থের কথা ভেবে।
বুধবার সাত সকালে কোন্নগরের বারো মন্দিরঘাটে প্রাতঃভ্রমণকারীদের কাছে ‘দিদিকে বলো’র সুবিধের কথা বোঝান বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। হাওড়া শহরে সাংবাদিক বৈঠকের পর পথচলতি মানুষের হাতে ‘দিদিকে বলো’ ফোন নম্বর লেখা কার্ড তুলে দেন মন্ত্রী অরূপ রায়। একই কাজ হুগলিতে করেন তপন দাশগুপ্ত, অসিত মজুমজদাররা। কলকাতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, জাভেদ খান ও আরও অনেকে ‘দিদিকে বলোর’ প্রচার করেন নিজের নিজের এলাকায়। মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আজ, বৃহস্পতিবার খিদিরপুরে এই নিয়ে প্রচার করবেন। জোড়াসাঁকোয় প্রচার করবেন স্মিতা বক্সি।
জনৈক পায়েল মোদক যেমন লিখেছেন, “দিদি, আপনাকে আমার শ্রদ্ধা জানাই। আমি নদিয়া জেলার একটি উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পার্ট টাইম শিক্ষিকা। পাঁচ বছর ধরে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা পড়াই। সেই জন্য বিদ্যালয় আমাকে ২০০০ টাকা বেতন দেয়। তাতে আমার সংসার চলে না। একটু দয়া করুন। আমার যোগাযোগের নম্বর ৯০৬৪৬০০৫৬১”। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে। সঞ্জয় রজক লিখেছেন, “সন্তানহীন দম্পতিদের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে আইভিএফ চালু করুন। যে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আইভিএফ হয়, সেখানে নজরদারির ব্যবস্থাও চালু করুন”। মহেশতলার দেবদত্তা পাল তাঁর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি দিদির উদ্দেশে লিখেছেন, “মহেশতলায় জল নিকাশির হাল খুব খারাপ। এখানকার কাউন্সিলর মহাশয়কে অনেক বার বলা সত্ত্বেও কাজ তো কিছু হল না”। জনৈক মুনমুন ঘোষের বক্তব্য, “দিদি, হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক গত ১০ বছর ধরে বন্ধ। আমি এই কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের হতভাগ্য কর্মীর স্ত্রী। ব্যাঙ্ক বন্ধ হওয়ার পর খুব কষ্ট করে আমাদের দিন চলছে। তারপর ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার পড়াশোনার খরচ আছে। দিদি আপনি কিছু একটা করুন। এই ব্যাঙ্কের ৪০ হাজার গ্রাহক আছেন। তাঁরাও এই ব্যাঙ্কে টাকা রেখে আজ সর্বস্বান্ত। অনেক গ্রাহক মারাও গিয়েছেন। দিদি আপনি আমাদের সকলকে বাঁচান”।