মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে ‘আর্থিক সংস্কারের’ নামে নামে এবার এমনই এক তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, যে ১০০ দিনের মধ্যেই তার কোপ পড়বে দেশের ৪২ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ওপর। তারপরই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। তবে মোদী সরকারের গৃহীত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দেদার বিলগ্নিকরণের নীতি যে সবক্ষেত্রে সঙ্ঘ পরিবারও সমর্থন করছে না, এবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল।
দেশের সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা তথা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির সব ইউনিটে আগামী ২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর অবধি টানা এক মাসব্যাপী কর্মচারী ধর্মঘটে গেরুয়া শিবিরের সংগঠনও পুরোদস্তুর শামিল হচ্ছে বাম ও অন্যান্য দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বা তাঁর দল ধর্মঘটের ঘোর বিরোধী হলেও অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিকে বেসরকারি হাতে দেওয়ার উদ্যোগ রুখতে দলনেত্রীর নির্দেশেই সংস্থার তৃণমূলপন্থী কর্মী সংগঠনও এই একমাসব্যাপী ধর্মঘটকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুটি-রুজির স্বার্থে।
প্রতিরক্ষা সচিব সঞ্জয় মিত্র সহ মন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকদের আগাম চিঠি দিয়ে জানালেও নিয়ম মেনে আজ, ১ আগস্ট কলকাতায় অবস্থিত সংস্থার সদর দফতর-সহ দেশের ৪১টি ইউনিটের কর্তৃপক্ষকেই ধর্মঘটের নোটিস ধরাবে উদ্যোক্তারা। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ৮৫ হাজার কর্মী মূলত তিনটি সর্বভারতীয় ফেডারেশনের সদস্য। এর মধ্যে একটি বাম ও দু’টি দক্ষিণপন্থী সংগঠন। দক্ষিণপন্থী দু’টির মধ্যে একটি পুরোদস্তুর গেরুয়া শিবির তথা আরএসএস-বিজেপি ঘেঁষা সংগঠন বলেই পরিচিত। সেই বিপিএমএস এবার বাকি দু’টি সংগঠনের মতো ধর্মঘটের নোটিস আলাদা করে দিতে চলেছে।
উল্লেখ্য, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সর্বভারতীয় স্তরে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘট-সহ কেন্দ্রবিরোধী যে কোনও ধরনের যৌথ কর্মসূচী থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছিল আরএসএস মদতপুষ্ট সংগঠন বিএমএস। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের নীতিতে সঙ্ঘ পরিবারের বড়কর্তারা যে সব সময় একশো শতাংশ মোদীর পাশে থাকবেন না, সম্ভবত সেই বার্তা দিতেই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কর্মচারী সংগঠনকে বাম ও ডানপন্থী অন্য দু’টি ফেডারেশনের সঙ্গে এই যৌথ কর্মসূচিতে শামিল হতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের সমরাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলিকে যদি এভাবে বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার, তাহলে শুধু কর্মীদের ভবিষ্যৎই নয়, দেশের নিরাপত্তাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়বে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে তাই আগেই গর্জে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন তিনি।