বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের সাগরেদরা যে বাড়ি বয়ে এসে তাঁদের ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, প্রাণে মারার ভয় দেখাচ্ছে, তাতে প্রাণঘাতী হামলার একটা আশঙ্কা ছিলই উন্নাওয়ের নির্যাতিতার। সেই আশঙ্কা থেকেই এ মাসের ১২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন ধর্ষিতার মা, বোন ও কাকিমা। সঙ্গে ছিল একটি ভিডিয়ো-নথিও। কিন্তু সেই চিঠি পৌঁছয়ইনি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের হাতে। কেন উন্নাওয়ে ধর্ষিতার মায়ের চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছয়নি, এবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইলেন গগৈ। উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে শীর্ষ আদালত। সে দিনই আদালতে রিপোর্ট পেশ করবেন সেক্রেটারি জেনারেল।
প্রসঙ্গত, বহুদিন আগে থেকেই প্রাণনশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তাঁদের। রায়বরেলির ‘দুর্ঘটনা’-র প্রায় ২ সপ্তাহ আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েছিলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতার পরিবার। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। গত ১২ জুলাই লেখা হয়েছিল সেই চিঠি। লিখেছিলেন উন্নাওয়ের ধর্ষিতার মা, বোন ও কাকিমা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মূল অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের লোকজন ক্রমাগত তাঁদের মামলা তুলে না নিলে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া দিচ্ছে। মঙ্গলবার এই চিঠির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর এরপর বুধবারই মুখ খোলেন গগৈ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজ সকালে খবরের কাগজে পড়লাম সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দিয়েছিলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। গতকাল (মঙ্গলবার) এই চিঠির বিষয়ে আমি জানতে পারলাম। এই চিঠি এখনও আমার সামনে আনা হয়নি। এই সাংঘাতিক ধ্বংসাত্মক পরিবেশে আমরা গঠনমূলক কিছু করার চেষ্টা করি।’ এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেও আখ্যা দেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, হিন্দিতে লেখা ওই চিঠির একটি নোট তৈরি করে তাঁকে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। গত জানুয়ারি মাসে এই মামলা দিল্লীতে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে একটি পিটিশনও দাখিল করেছিলেন ধর্ষিতার মা। তিনি বলেছিলেন, ‘লখনউতে তাঁর পরিবার বিপদের মুখে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে এই মামলার সঠিক ট্রায়াল হবে না।’
উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতিকে পাঠানো চিঠির সঙ্গে ছিল একটি ভিডিও-নথিও। গতকাল ওই ভিডিওটি সংবাদমাধ্যমকে দেখায় মেয়েটির পরিবার। যেখানে দেখা গেছে, নীল শার্ট পরা একটি লোক ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ধর্ষিতার বাড়ির সামনে। ধর্ষিতার বোন তাকে বারবার বলছেন চলে যেতে। সে নড়ছে না। বোন প্রশ্ন করছেন, ‘কেন এমন করছেন? আমরা কী করেছি?’ লোকটি উত্তর দিচ্ছে, ‘তোমরা আমার পরিবারকে শেষ করে দিয়েছ।’ লোকটি উন্নাও ধর্ষণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত শশী সিংহের স্বামী বলে জানা গেছে। এই শশীই ধর্ষিতাকে কুলদীপের কাছে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। শশীর ছেলে এবং গাড়িচালকের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর থেকে শশী জেলে। ধর্ষিতার পরিবারের তরফে লেখা চিঠিটিতেও শশীর ছেলে-স্বামী, কুলদীপের ভাই মনোজ নিয়মিত শাসাচ্ছে বলে দাবি করা হয়।