মুম্বইয়ের প্রতিশ্রুতিমান নতুন তারকা, ১৯ বছরের পৃথ্বী গত বছরেই দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট খেলেন। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরিও করেছিলেন। তার আগে পৃথ্বীর নেতৃত্বেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। যাঁর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ও। সেই প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়ই এবার ডোপিংয়ে ধরা পড়ে সমস্ত ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে আট মাসের জন্য নির্বাসিত হলেন।
মঙ্গলবার বোর্ড যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, বোর্ডের ডোপবিরোধী কর্মসূচি অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার সময় তাঁর মূত্র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই নমুনায় ধরা পড়ে টার্বুটালিনের উপস্থিতি। যা সাধারণত সর্দি-কাশির জন্য ব্যবহৃত সিরাপে থাকে। বিশ্ব ডোপবিরোধী সংস্থার (ওয়াডা) নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে টার্বুটালিন। ঘটনা হল, এই ধরনের নিষিদ্ধ যৌগ উপাদান যে ওষুধে থাকে, তা একান্তই যদি কোনও খেলায়াড়কে গ্রহণ করতে হয়, তবে তাঁর সঙ্গে ‘থেরাপিউটিক ইউজ এক্সেমপসন সার্টিফিকেট’ থাকা বাধ্যতামূলক। তাঁর কাছে তেমন কোনও সার্টিফিকেট ছিল না।
বোর্ড এ দিন যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘মূত্র নমুনায় নিষিদ্ধ ওষুধের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরেই গত ১৬ জুলাই বোর্ডের ডোপবিরোধী আইনের ২.১ ধারা লঙ্ঘন করার অভিযোগ করা হয় পৃথ্বীর বিরুদ্ধে। যে ধারায় বলা হয়েছে, ডোপিংয়ে ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে সাময়িক ভাবে নির্বাসিত করা যেতে পারে। পৃথ্বী জানান, না জেনেই শ্বাসকষ্টের কারণে তিনি ওই ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন। এর সঙ্গে পারফরম্যান্স বাড়ানোর কোনও সম্পর্ক নেই।’’ বোর্ডও সমস্ত ধরনের প্রমাণ খতিয়ে দেখে এবং পরে বাইরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হয় যে, পৃথ্বী অজান্তেই এই ওষুধ খেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ডোপবিরোধী আইনের ১০.১০.৩ ধারা মেনে তাঁকে আট মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে। তাঁর শাস্তির দিন গোনা হবে ১৬ মার্চ থেকে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর মধ্যরাতে। অর্থাৎ হিসেব মতো সাড়ে সাত মাসের জন্য নির্বাসিত থাকতে হবে তাঁকে। বোর্ডের ডোপবিরোধী আইনের ১০.১১.২ ধারা অনুযায়ী, তার পরেই পৃথ্বী রাজ্য দলের অথবা কোন ক্লাবে গিয়ে অনুশীলন করতে পারেন। এই মুহূর্তে কোমরের নীচের অংশের চোট সারাতে রিহ্যাব করছেন বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।
ডোপিংয়ের দায়ে শাস্তি পাওয়ার খবরটা যে তাঁকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়েছে, তা জানাচ্ছেন পৃথ্বী শ। বুধবার তাঁর শাস্তি পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে পৃথ্বী একটি টুইট করেন। যেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আমার ভাগ্যকে আমি মনে নিচ্ছি। শেষ প্রতিযোগিতায় খেলার সময় আমি চোট পেয়েছিলাম। সে-ই চোট সারিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছি আমি। তারই মধ্যে শাস্তির এই খবরটা আমাকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়েছে।’’
পৃথ্বী আরও লিখেছেন, ‘‘এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মুম্বইয়ের হয়ে মুস্তাক আলি ট্রফিতে খেলার সময় আমি ভীষণ সর্দি-কাশিতে ভুগছিলাম। ওই সময় কাশির একটা সিরাপ খেয়েছিলাম। যার মধ্যে ওই নিষিদ্ধ বস্তুটি ছিল। অসাবধানতাবশতই আমি ওই নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়ে ফেলেছিলাম। যে কারণে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্রিকেট খেলতে পারব না”।
শাস্তি পেলেও পাশে থাকার জন্য ভারতীয় বোর্ডকে ধন্যবাদ দিয়েছেন পৃথ্বী। পাশাপাশি লিখেছেন, ‘‘যারা সব সময় আমার পাশে থেকেছেন, তাঁদেরও আমি ধন্যবাদ দিতে চাই।’’ সব শেষে পৃথ্বীর শপথ, ‘‘ক্রিকেট আমার জীবন। মুম্বই এবং ভারতের হয়ে খেলার চেয়ে গর্বের আর কিছু নেই। আমি এই দুঃসময় থেকে দ্রুত এবং আরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসব। আমার পাশে থাকার জন্য সবাইকে আবার ধন্যবাদ।’’