সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বাম শিবির। একসময়ের ঘাঁটি বাংলা থেকে এইবার ‘শূণ্য’ হাতে ফিরেছেন তাঁরা। এমনকি সারা দেশেও মাত্র পাঁচটি আসন পেয়েছে। আর এইভাবে কোণঠাসা হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে বামেদের নীতি নিয়ে, প্রশ্ন উঠেছে নেতৃত্ব নিয়ে। কিন্তু তারপরও নিজেদের সমালোচনার জায়গায় না গিয়ে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কিন্তু বাম নেতৃত্ব নিয়ে অনেক বাম নেতাই যে অখুশি তা বারবার সামনে এসেছে। এইবার সেই নাম লেখালেন বর্ষীয়ান বাম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
‘কাটমানি’ নিয়ে বারবার বাম নেতৃত্ব সরব হয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে। তবে এই কাটমানি ইস্যুই বুমেরাং হয়ে গেল বামেদের। গতকাল কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় আলিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কাটমানি বাম আমল থেকেই শুরু হয়েছে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করে বেশ আলোড়ন ফেলেছে দেশে। আর তারপর বামেদের হালে পানি আনার চেষ্টা করেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী। কিন্তু ক্ষত এতই বড় যে ওই মলমে কাজ দেয়নি।
সোমবার কাটমানি ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন প্রাক্তন বাম মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘তৃণমূল নয়, কাটমানির জন্ম বাম আমলেই। সেই সময়েই পঞ্চায়েত স্তরে বাসা বেঁধেছিল কাটমানি রোগ। আর এই দুর্নীতি রুখতে ব্যর্থ হয়েছিল দল’। কাটমানি নিয়ে সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের পর কান্তির এহেন বিতর্কিত মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তিতে বাম শিবির।
তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে নিজেদের ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করার চেষ্টা করেন সুজনবাবু। তিনি বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরে এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। তাই বাইরে বলার প্রয়োজন পড়ে না। কেউ যদি বাইরে কথা বলে থাকেন, তাহলে তিনি তাঁর দল ও দলের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝতে পারেননি। শিক্ষা তো প্রতি মুহূর্তে আপডেট হয়, কেউ কোনও কারণে হয়তো পারলেন না।’ তবে তিনি যাই বলুক না কেন তা বাম আমলেই যে দুর্নীতির শুরু হয়েছে তা স্পষ্ট।
এই বর্ষীয়ান বাম নেতা আরও বলেন, দলকে তিনি একথা একাধিকবার জানিয়েছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। নেতাদের দূরদর্শিতার অভাব বারবার ধরা পড়েছে বলেও তির ছোড়েন তিনি। ২০০৮ সালের পর থেকে পঞ্চায়েত স্তরে বেশিরভাগ নেতাই এই দোষে দুষ্ট বলে অভিযোগ করেন তিনি। শুধু যে কান্তি নয়। এর আগেও তন্ময় ভট্টাচার্য থেকে আনিসুর বারবার প্রশ্ন তুলেছে দলের ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আর দিনে দিনে চওড়া হচ্ছে সেই তালিকা। ধীরে ধীরে উন্মোচন হচ্ছে বাম আমলের সব দুর্নীতিগুলো এমনই মনে করছেন নানা মহল।