দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণার দিনই ধস নেমেছিল শেয়ার বাজারে। আর তার একদিন পরেই সেই ধস আরও ভয়াবহ চেহারা নিয়ে রীতিমতো ঝাঁকুনি দিয়েছিল লগ্নিকারীদের। তারপর থেকেই দুশ্চিন্তার মেঘে ঢেকেছে লগ্নির আকাশ। শেয়ার কিনতে অনীহা দেখা দেওয়ায় মুখভার বাজারের। ফলে প্রায় রোজই নামছে সূচক। শুধু তাই নয়। কিছু সংস্থা ঋণপত্রের সুদ মেটাতে না পারায় মানুষের আস্থা কমেছে ডেট ফান্ডে (ঋণপত্র নির্ভর)। সুদ কমছে স্থায়ী আয় প্রকল্পেও। আর এই সব মিলিয়ে হঠাৎই যেন ছোট হয়ে গেছে লগ্নির জায়গা।
এরমধ্যেই চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন সংস্থার ফল একে একে প্রকাশ হচ্ছে। অর্থনীতির অস্বস্তি বাড়িয়ে স্পষ্ট হচ্ছে চাহিদার পতনের ছবিটাও। চাহিদা কমায় উৎপাদন ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। কর্মসংস্থানের উপরে যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার শিল্পে নতুন লগ্নী তেমন না হওয়ায় তৈরি হচ্ছে না নতুন কাজ। বৃষ্টি কম হওয়ায় সমস্যায় কৃষিও। সব মিলিয়ে অর্থনীতির ওপরে চাপ বাড়ছে। এই অবস্থায় ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)। এসবের ধাক্কায় ফের বেসামাল শেয়ার বাজার।
গত শুক্রবার ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করেছে দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি। দেশের মধ্যে তাদের গাড়ির বিক্রি এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ১৯.৩ শতাংশ কমেছে। বিপুল কমেছে নিট মুনাফা। অন্যান্য গাড়ি সংস্থাগুলির বিক্রির হালও তথৈবচ। গাড়ি বিক্রি এবং উৎপাদন কমায় চাপ বাড়ছে যন্ত্রাংশ শিল্পের। সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে শিল্পের বক্তব্য, অবিলম্বে চাহিদার উন্নতি না হলে আগামী দিনে ১০ লক্ষ কর্মী কাজ হারাতে পারেন। বস্তুত, চাহিদার পতনের জেরে ভারতে ১,৭১০ জন কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা নিসান।
অস্বস্তিতে অন্যান্য ক্ষেত্রও। যেমন, মুনাফা বাড়লেও সেই অনুপাতে বিক্রি বাড়েনি ভোগ্যপণ্য নির্মাতা হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের। বিক্রি বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ, যা আগের সাতটি ত্রৈমাসিকের মধ্যে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে, দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ায় ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৩ শতাংশ ছাঁটাই করে যথাক্রমে ৭ এবং ৭.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে আইএমএফ। বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা পতনের পাশাপাশি এই পূর্বাভাস ছাঁটাইয়েরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত সপ্তাহে ভাল রকম ধাক্কা খেয়েছে দুই প্রধান সূচক। এই বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে মোদী সরকার এখন কী পদক্ষেপ করে সেটাই এখন দেখার।