চেষ্টা চলছিল লোকসভা ভোটের বহু আগে থেকেই৷ তবে ফলপ্রকাশের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতেই কোমড় বেঁধে নামে গেরুয়া শিবির। অবশেষে টানা ১৭ রজনী পার করার পর ‘ঘোড়া কেনাবেচা’, দফায় দফায় বিধায়কদের ইস্তফা আর আস্থা ভোট নিয়ে চলা কর্ণাটকের রাজনৈতিক নাটকের যবনিকা পতন ঘটেছে গত বুধবার, জোট সরকার ৬ ভোটে হারার পরই। তবে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বি এস ইয়েদুরাপ্পা চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতা দখল করতেই বিজেপিকে নিশানা করল কংগ্রেস-জেডিএস। ‘অসাংবিধানিকভাবে’ সরকার গড়া নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগেছে তারা। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে বলেও সরব হয়েছে বিদায়ী জোট। পাশাপাশি, রাজ্যপাল বাজুভাই বালার নিরপেক্ষতা ও সাংবিধানিক অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা।
ইয়েদুরাপ্পাকে ‘দুর্নীতিবাজ ও জেল ফেরৎ’ আখ্যা দিয়ে টুইটারে কংগ্রেস লিখেছে, ‘গণতন্ত্র ধ্বংস করে ক্ষমতায় আসতে ঘোড়া কেনা-বেচার সুচারু বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা। ২০০৮-১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ইয়েদুরাপ্পার অপশাসন কর্ণাটকবাসীর জানা রয়েছে, যা শেষ হয়েছিল জেল যাত্রায়।’ পাশাপাশি সরকার গঠনে রাজ্যপালের অনুমতি দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া। কংগ্রেসের এই পরিষদীয় নেতা লিখেছেন, ‘রাজ্য বিজেপির কাছে পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে কর্ণাটক বিধানসভা। সংবিধান অনুসরণ করলে রাজ্যপাল কখনই বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্য ডাকতে পারতেন না।’
এর পাশাপাশি অন্য একটি টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর উদ্দেশ্যে কংগ্রেস লিখেছে, ‘কর্ণাটকে সংসদীয় গণতন্ত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকা সত্ত্বেও কী করে ইয়েদুরাপ্পা সরকার গড়ার দাবি জানাতে পারে? সংবিধানের রক্ষাকর্তা হয়েও কী করে তা করতে পারেন? আইন তাহলে কোথায়!’ একই সুর শোনা গিয়েছে শরিক জেডিএসের গলাতেও। টুইটারে তারা লিখেছে, ‘তিন বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে কর্ণাটক বিধানসভায় বর্তমান আসন সংখ্যা ২২২। সেইমতো সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১২। অথচ ইয়েদুরাপ্পা বলছে, তাঁর সঙ্গে ১০৫ জন বিধায়তের সমর্থন রয়েছে।’
এই মুহূর্তে কর্ণাটক বিধানসভায় দুই নির্দল বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বিজেপি ঝুলিতে। ফলে তাদের মোট সংখ্যা ১০৭। যেখোনে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের ঝুলিতে রয়েছে ৯৯ জন বিধায়কের সমর্থন। এর মধ্যে স্পিকার রমেশ কুমার বৃহস্পতিবার রাতেই তিন জনের সদস্যপদ খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁরা হলেন, কংগ্রেস বিধায়ক আর শঙ্কর এবং রমেশ জারকিহোলি ও মহেশ কুমথালি। ফলে এই তিন বিধায়ক আর বিধানসভার সদস্য রইলেন না। সেইসঙ্গে, বিধানসভা ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা ভোটেও লড়তে পারবেন না। অন্যদিকে, আস্থা ভোটে গরহাজির থাকায় কর্ণাটকের একমাত্র বসপা বিধায়ক এন মহেশকে বহিষ্কার করেছেন দলনেত্রী মায়াবতী।
নির্দল ও অন্য দলের সমর্থন নিয়ে কর্ণাটকে বিজেপি সরকার গড়লেও পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহী বিধায়কদের ভূমিকা বিজেপির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কেননা, এঁরা এইচ ডি কুমারস্বামীকে সরালেও এঁদের অধিকাংশই সিদ্ধারামাইয়া ঘনিষ্ঠ। তাই এই বিধায়কদের সঙ্গে কংগ্রেসের ফের যোগাযোগের সম্ভাবনা রয়েই গেছে। এছাড়া, কর্ণাটক মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও স্পিকারের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে ইয়েদুরাপ্পাকে। এরই মধ্যে টুইটারে মায়াবতী লেখেন, ‘যেভাবে সাংবিধানিক নিয়মকে পাশ কাটিয়ে টাকা এবং ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের থেকে সরকারের দখল নিল বিজেপি, তা গণতন্ত্রের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। যা হল তার জন্য কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়।’