২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ অবতারে দেখা গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীকে। সেবার দেশবাসীর কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর। কিন্তু আদতে দেখা গেছে, তিনি প্রথমবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ৫ বছরে নতুন চাকরি তো হয়ইনি, উল্টে চাকরি গেছে বহু মানুষের।
এবারও ভোটে জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। আগেরবারের মতোই দেশের কর্মসংস্থানের পথ চওড়া করতে হরেক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তাতেও যে কর্মসংস্থানের পথ খুব একটা মসৃণ হচ্ছে না, রাজ্যে রাজ্যে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির হারই তার প্রমাণ দিচ্ছে।
ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস বা এনএসও লোকসভা ভোটের পরই জানিয়েছে, দেশের বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দক্ষ শ্রমিক তৈরিতেও যে দেশ খুব একটা এগতে পারছে না, তারও আঁচ পাওয়া যাচ্ছে শিল্পমহলে। নয়া প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে আলাদা মন্ত্রক। কিন্তু সেই মন্ত্রক থাকা সত্ত্বেও তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে একটি বণিকসভা।
একটি ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তারা যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, সেখানে তারা বলছে, এদেশে দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত মন্ত্রক আলাদা করে খুব একটা কাজ করার সুযোগ পায় না। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে যে মন্ত্রকগুলি আছে, সেখানেই ছন্নছাড়াভাবে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু স্কিম বা পলিসি আছে। সেগুলির একটির সঙ্গে অন্যটির তেমন যোগ নেই। দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত মন্ত্রক সেই স্কিমগুলিরই সংযোগ রক্ষাকারী মন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।
ওই রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সরকার এভাবে কাজ না করে একটি আলাদা মন্ত্রক তৈরি করুক, যেখানে বাদবাকি মন্ত্রকের আওতায় থাকা দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত স্কিমগুলিকে সরিয়ে, তা ওই মন্ত্রকের আওতায় আনা যাবে। এতে যেমন বিষয়টি মনিটরিং বা দেখভাল করা অনেক সুবিধাজনক হবে, তেমনই তা আরও বেশি কার্যকর হবে বলে আশা করছে ওই বণিকসভা।
বর্তমানে আমেরিকা, ব্রিটেন বা জার্মানিতে যত দক্ষ শ্রমিক কাজ করেন, তার তুলনায় এখানে দক্ষ শ্রমিকের হার অতি নগণ্য, মাত্র তিন শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, ভারতে বিষয়টিকে তদারকি করার কতটা প্রয়োজন আছে, দাবি করেছে রিপোর্টটি। পরিসংখ্যান বলছে এদেশে অল্প বয়সিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হতে চলেছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে।
অর্থাৎ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যায় ভারতকে কুর্নিশ করবে গোটা দুনিয়া। কিন্তু সেই কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগানো কতটা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্নই তুলেছে বণিকসভা। তাদের বক্তব্য, নতুন প্রজন্মকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে এটাই উপযুক্ত সময়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকার এই সংক্রান্ত একটি আলাদা মন্ত্রক গড়ুক, যার জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ করা হোক। সেই টাকায় তারা সরকারেরই চালু করা প্রকল্পগুলিকে আরও কার্যকর করতে পারবে। এর বাইরে স্কুল স্তর থেকেই বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপরও আরও বেশি করে জোর দিক সরকার, বলছে রিপোর্ট।