লাগাতার বৃষ্টির জেরে হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল আসামের বন্যা পরিস্থিতি। রাজ্যের যে দিকেই চোখ যায়, এখনও বিপর্যস্ত জনজীবন। তবে এতেও কোনও ভ্রূক্ষেপই হেলদোলই নেই রাজ্যের বিজেপি সরকারের। তাদের তরফে ফলাও করে ত্রাণ বিলির কথা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে সেটা বন্যাদুর্গতরা পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ। কারণ এবার আসামের ত্রাণ শিবিরেই অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় এক তরুণীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার বিলাসিপুরে ত্রাণ শিবিরেই মৃত্যু হয়েছে এই তরুণীর। অভিযোগ, তিন দিন ধরে কোনও খাবার না পেয়ে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসাও জোটেনি। ধকল সইতে না পেরে মারা যান তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫। এনসেফেলাইটিসেও শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বণ্টন নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে রাজ্য। তবে এতকিছুর পরেও শাসক দল অবশ্য ব্যস্ত এনআরসি নিয়ে। আসাম চুক্তি রূপায়ণের নামে বাঙালিদের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর তার ফলে এমন সংকট কালেও ‘জান’-এর থেকে ‘মান’ বাঁচানোই বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের।
বন্যা কবলিত আসামে শুক্রবারই শুরু হয়েছে বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন। ত্রাণ ও অন্যান্য ইস্যুতে সভার ভিতরে-বাইরে ঝড়। বন্যা ও জাপানি এনসেফেলাইটিস প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাকের করিমগঞ্জে বন্যার পর বিদ্যুৎ পরিষেবা ফের চালু করার দাবিতে অনশনে বসেন। বিধানসভার বাইরেও বিভিন্ন সংগঠনের তরফে বন্যা ত্রাণের পাশাপাশি নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে চলে বিক্ষোভ।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার অভিযোগ, রাজ্যের মানুষ বন্যায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ ত্রাণ নেই। গতকাল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন সংগঠন আসামের বন্যাকে জাতীয় দুর্যোগ বলে ঘোষণারও দাবি করেন।
ছাত্র সংগঠন আসু–র অভিযোগ, আসামের বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিজেপি আন্তরিক নয়। তাই ভয়ঙ্কর বন্যার সময় আসাম সফরে আসার প্রয়োজন মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা লোয়ার সুবনসিঁড়ি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ছাড়া জল দুর্ভোগ বাড়িয়েছে আসামের। ত্রাণ বণ্টন নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমুজ্জ্বল।