প্রথম হিন্দি ছবিতেই টানটান উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছেন পরিচালক প্রকাশ কোভেলামুড়ি। ছবির নাম ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’। এই ছবির প্লটের ঘোরপ্যাঁচে দর্শকের মস্তিষ্কও ঘুরতে থাকে! তবে কিছু ত্রুটি থাকলেও সাইকোলজিক্যাল ব্ল্যাক কমেডির আর্দশ উদাহরণ হতে পারে ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’। কে আসল ‘মেন্টাল’ সেটা খুঁজতেই ‘জাজমেন্টাল’ হওয়ার অবস্থা!
এই ছবির প্রথমে নাম ছিল ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’। মানসিক রোগীদের ভাবাবেগে আঘাত-সহ নানা আপত্তির কারণে নির্মাতারা ‘মেন্টাল’ শব্দটির পরিবর্তে ‘জাজমেন্টাল’ বসিয়েছেন। কাহিনিতে মানসিক রোগীদের নিয়ে মশকরা না করা হলেও কঙ্গনার চরিত্রটির উদ্দেশে ‘পাগল’, ‘মেন্টাল’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তব তো তাই। কারও মানসিক স্থিতিকে প্রশ্ন করে আকছার ওই শব্দবন্ধগুলো ব্যবহার করা হয়। সিনেমা তো আসলে বাস্তবের প্রতিফলন, তাই সেটা কতোটা সমাজের আয়না হবে না কি পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকবে, তার মীমাংসা খুব একটা সহজ নয়।
কঙ্গনা রানাউত যে মানসিক রোগী, সেটা ট্রেলারেই স্পষ্ট ছিল। কিন্তু রাজকুমার রাওয়ের গল্পটা আলাদা৷ গোটা ছবি জুড়ে সেটাই খুটিয়ে দেখতে হয় দর্শককে। যখনই মনে হবে রাজকুমারের চরিত্রটিই আসল অপরাধী, তখনই কঙ্গনার কোনও একটি ‘উদ্ভট’ কাণ্ড তাতে পরত ফেলে দিচ্ছে।
ববির (কঙ্গনা) শৈশব মসৃণ ছিল না। এক দুর্ঘটনায় তার বাবা-মা মারা যায়। বড় হওয়ার পরেও ববির কিছু আচরণ বলে দেয়, মেয়েটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়। আসলে কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা অস্বাভাবিক, তার গণ্ডিটা খুব সূক্ষ্ম। ফিল্মস্টারদের মতো পোশাক পরা, সিনেমার চরিত্রদের মতো সেজে ছবি তোলাই কি চূড়ান্ত পাগলামির উদাহরণ? উল্টো দিকে রাজকুমারের চরিত্র কেশবের জীবন একদম ঠিকঠাক স্রোতে। কিন্তু আচমকাই তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এটা নিছক দুর্ঘটনা না কি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? ববি একেবারে নিজস্ব স্টাইলে তদন্তে নামে। স্বাভাবিক ভাবেই কোনও দৃশ্যে সে হাসির খোরাক, কোনও দৃশ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আবার নিজের অজান্তেই ঘটিয়ে ফেলেছে অঘটন।
শোনা গিয়েছিল, রাজকুমারের কিছু দৃশ্য কাঁচি করেছেন কঙ্গনা। রাজকুমার সেই জাতের অভিনেতা, যিনি পাঁচ সেকেন্ডের চরিত্রেও মনে থেকে যাওয়ার মতো পারফরম্যান্স দিতে পারেন। এ ছবিতেও তিনি নিজের জায়গায় যতটা করার, ঠিক ততটাই করেছেন। তবে কঙ্গনা সেরা। ববির অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব নিখুঁত ভাবে ফুটিয়েছেন। এই চরিত্র তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারতেন না।
তবে সন্দেহ, আতঙ্ক, হিউমর— সবটা ছবির দুই অর্ধেই খুব সুন্দর করে মিশিয়েছেন চিত্রনাট্যকার কণিকা ধিলোঁ। তা বলে কি একেবারেই ফাঁকফোকর নেই? ববি যেখানে সন্দেহ করছে তার বোনের জীবনসঙ্কট, সেখানে সে কী ভাবে ঘটনাস্থলে সন্তানসম্ভবা বোনকে হাজির করল? ববির মানসিক অস্থিরতা বোঝানোর জায়গাগুলো কারও অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। কিন্তু ববির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রাখলে বোঝা যায়, কেন পরিচালক ওই দৃশ্যগুলি চড়া সুরে বেঁধেছেন।