অসুস্থ। কথাবার্তা বলতে অসুবিধা হয়। তবু, ১ আগস্ট বিকেলে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবার্ষিকী উৎসবে যোগ দিতে যাবেন। ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে খেলেননি কখনও। তবু পি কে ব্যানার্জিকে উপেক্ষা করতে পারেনি দুই প্রধান। কোচ হিসেবেই ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানকে তাঁবু আলো–করা ট্রফি এনে দিয়েছিলেন বছরের পর বছর।
১০০ বছরের সাফল্যের তালিকায় চোখ বোলাতে গেলে পি কে ব্যানার্জিকে উপেক্ষা করা কঠিন। ১৯৭২ থেকে পরপর ৫ বছর টানা লিগ জয়ের কৃতিত্ব ইস্টবেঙ্গলের রয়েছে। তিনিই কোচ। ১৯৭৫ সালে শিল্ড ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানকে ৫–০ গোলে হারানোর মুহূর্তেও তিনিই কোচ। রোভার্স, ডুরান্ড, ডিসিএম, বরদলৈ ট্রফি, ফেডারেশন কাপ— দেশের সব ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় তাঁর হাত ধরে ট্রফি পেয়েছে দুই বড় ক্লাব, ‘কোনও দিন ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান ক্লাবে খেলার সুযোগ পাইনি। এখন আক্ষেপ হয়। তবে দুই প্রধানে কোচিং করিয়ে যে সাফল্য পেয়েছি, তাতে ওই আক্ষেপ খানিকটা কমে যায়। আমি খুব খুশি আদর করে ইস্টবেঙ্গল আমন্ত্রণ জানিয়েছে ওদের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য। আশা করছি ওখানে আমার সুযোগ্য ছাত্ররাও আসবে। তাদের নিয়ে হইচই করে আরও একটা বিকেল–সন্ধে কাটানোর জন্য ছটফট করছি। এইরকম পরিবেশে অসুস্থতার কথা কেমন করে যেন ভুলে যাই।’
লাল–হলুদ শিবিরের শতবর্ষে পা রাখার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বোঝা গেল না তিনি অসুস্থ। ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানকে মনে হল, যেন একশো পেরনো ক্লাবের উৎসব, তাঁর পরিবারেরও বটে, ‘এটা একটা বড় মাইলস্টোন। বেঁচে থাকতে থাকতে কলকাতার দুই সেরা ক্লাবের শতবর্ষ পেরনোর মুহূর্ত দেখে যাচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ ওপরওয়ালাকে।’ এ সবের মাঝেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিচারণ, ‘১৯৭২ সালে প্রথম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোচ হওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলাম। কোচিং করিয়ে আনন্দ পেয়েছি দুই প্রধানেই। তবে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর উত্তেজনা থাকত অন্যরকম। ওখানকার সমর্থকদের ভালবাসার ধরন–ধারণ সব আলাদা। আন্তরিকতা বেশি, তাঁবু জুড়ে থাকত লড়াকু মেজাজ।’
এই ১০০ বছরের অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি নিজে। ‘আপনার দেখা সেরা ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার কে?’ দুটি নাম উল্লেখ করলেন, ‘আমেদ খান এবং তুলসীদাস বলরাম। দু’জনের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন।’ ‘যে সব ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের কোচিং করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সেরা কে?’ এবার যেন একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন ফিফার বিচারে শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ফুটবলার, ‘অনেকগুলো পজিশন। গোলরক্ষক থেকে সেন্টার ফরোয়ার্ড। এতগুলো বছর! তবু, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে এগিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি রাখতে চাইব সুধীর কর্মকারকে। তবে, আমার কোচিংয়ে ভাল ফুটবল খেলে গেছে অন্তত ২০ জন ফুটবলার। মহম্মদ হাবিবকে হয়তো পাক্কা ইস্টবেঙ্গলি বলা যাবে না। কারণ ও তিন প্রধানেই খেলেছে। লাল–হলুদ জার্সির অমর্যাদা হাবিব মিয়াঁ কখনও করেনি।’ একটু থেমেই আবার বলতে শুরু করলেন, ‘গদ্দারি হয়ে যাবে যদি আমি স্বপন বল এবং শঙ্কর মালির নাম উল্লেখ না করি। হয়তো ওরা মাঠে নেমে ফুটবল খেলেনি। তবে এই দু’জনের যে আন্তরিকতা মাঠের বাইরে দেখেছি, তাতে, দু’জনকেই আমি কৃতিত্ব দেব। দু’জনেই আজ আমাদের মধ্যে নেই। চাইব শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যেন এই দু’জনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। আমি বিশ্বাস করি ওঁদের শরীরে রক্তের রং ছিল লাল–হলুদ।’ পর্দার পেছনে এই দু’জনের যে কী অসাধারণ ভূমিকা ছিল, তা শুধু জানেন তাঁরাই যাঁরা নিয়মিত ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে যাতায়াত করতেন।