একদিকে তিস্তার বাঁকে বিপুল জলরাশি তিস্তার আর বোরোলির স্বাদ। অন্যদিকে বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গলের সবুজ আঁচল। মাঝে ক্যানভাসের মতো দাঁড়িয়ে আছে মেঘে ছেঁয়ে যাওয়া হিমালয়ের চূড়া। সব মিলিয়ে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত এই গজলডোবাই হতে চলেছে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির নতুন ডেস্টিনেশন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রথম পাহাড় এসেই এই গজলডোবাকে আবিষ্কার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন দেখা তেমন কাজ। এরপর গত বছরের শেষের দিকে গজলডোবায় মেগা ট্যুরিজম হাবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মাঝে জমি নিয়ে সমস্যার তৈরি হলেও এবার কেটে গেল জমি-জট।
জানা গেছে, সরকারি প্যাকেজ শুনে খুশি আন্দোলনকারীরা। যার ফলে, গজলডোবায় তিস্তা ক্যানেলের ওপর সেতু নির্মাণে বাধা অনেকটাই কাটল। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জমির পরিবর্তে জমি, পরিবার পিছু চাকরি, আর্থিক সাহায্য, জমির অধিকার দেওয়া হবে। একসঙ্গে এতরকম আশ্বাস পাওয়ায় আর আপত্তি নেই জমিদাতাদের। বৃহস্পতিবার পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে বৈঠকের শেষে আন্দোলনকারীরা জানান, ‘সব দাবি মিটতে পারে না। তবে আমরা উন্নয়নের পক্ষেই রয়েছি।’ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও বলেন, ‘দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল প্যাকেজ এখানে দেওয়া হবে। এই প্যাকেজে আর কোনও আপত্তি থাকার কথাও নয়।’
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ট্যুরিজম হাব ‘ভোরের আলো’য় পর্যটকদের সরাসরি ঢোকার জন্য গজলডোবায় তিস্তা ক্যানেলের ওপর একটি সেতু করা হচ্ছে। এখন তিস্তা ব্যারেজ লাগোয়া সেচ দফতরের পুরনো সেতুটি ব্যবহার করা হয়। তাই ক্যানেলের ওপর দিয়ে পারাপারের জন্য আড়াআড়ি একটি ঝুলন্ত সেতুর পরিকল্পনা নেয় পর্যটন দফতর। পূর্ত দফতর প্রায় ১২৫ কোটির সেই সেতুর কাজ শুরু করেছে। ১২৫ মিটার দীর্ঘ ওই সেতু জুড়বে ভোরের আলোর যুব আবাস লাগোয়া এবং ওপারে মিলনপল্লী ক্যানেল পাড় এলাকা। তবে সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড করার জন্য এই এলাকার ১৪টি পরিবারের কারও বাড়ি, কারও জমি ও কারও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁদের প্রায় ৫ একর জায়গা প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগেই তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, বিজেপি আন্দোলনকারীদের উস্কে দেওয়ায় শুরু হয় আন্দোলন। তাতেই বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরপর পর্যটনমন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি পরিবার মন্ত্রীর ডাকে শিলিগুড়িতে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে স্থির হয়েছে, ১৪টি পরিবারে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। যাঁর যতটা জমি নেওয়া হবে, সমপরিমাণ জমি কাছাকাছি এলাকায় দেওয়া হবে৷ মিলবে জমির পাট্টাও।
শুধু তাই নয়। বাড়ি করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হোম-স্টে প্রকল্পের অধীনে পরিবারগুলিকে দেড় লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। সঙ্গে ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে শৌচাগার তৈরির জন্য আলাদা করে প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হবে। নতুন জায়গায় তাঁদের পরিকাঠামো, রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, খেলার মাঠ ও সেখানকার ছোট কালীমন্দির আরও ভাল করে তৈরি করে দেওয়া হবে। প্রকল্প তৈরির পর বাড়তি জায়গার মালিকানা জমিদাতাদেরই থেকে যাবে। যে পরিবারে চাকরি করার লোক নেই, তাঁদের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। এতটা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়েই সুর নরম করে নেয় আন্দোলনকারীরা।