বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধীতা শুরু করেছিল আরএসএসের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। বাজেট ঘোষণা মতো বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়া হলে দেশের অর্থনীতি ঘোর সঙ্কটে পড়বে বলে সতর্ক করেছিলেন মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন। এর পরেই ‘বলির পাঁঠা’ করা হল বর্ষীয়ান আইএএস সুভাষ চন্দ্র গর্গকে।
মাস চারেক আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থসচিব পদে৷ তখন কেউ ভাবেনি এত সংক্ষিপ্ত হবে তাঁর কার্যকাল৷ বুধবার রাতে তাঁকে বদলি করা হল বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সচিবের পদে৷ এর পরে ২৪ ঘণ্টাও পেরোয়নি, চাকরি থেকে আগাম অবসরের আবেদন জানালেন বর্ষীয়ান এই আইএএস৷ যা নিয়ে রাজধানীর অন্দরে এখন প্রবল জল্পনা, বাজেটের ২০ দিনের মাথায় বুধবার রাতে মোদী সরকার অর্থসচিবের পদ থেকে সুভাষচন্দ্র গর্গকে সরিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিল, তার পিছনে আরএসএসের চাপই প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সুভাষ গর্গ কোনও কারণ ব্যাখ্যা না করে শুধু বলেছেন, ‘অর্থ মন্ত্রক থেকে অনেক কিছু শিখেছি৷ আজ দায়িত্ব হস্তান্তর করে দিয়েছি৷ শুক্রবার বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করব৷ ৩১ অক্টোবর থেকে আগাম অবসরের আবেদন করেছি৷’ আর তাঁর এই প্রতিক্রিয়ায় জল্পনা আরও বেড়েছে৷ অর্থ মন্ত্রকের অধিকাংশ আমলা মনে করেন, কেন্দ্রের একেবারে শীর্ষ স্তরের একাংশের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরেই সরতে হল এই অভিজ্ঞ আইএএসকে৷
সুভাষ গর্গের পরিবর্তে নতুন অর্থসচিব হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন ১৯৮৫ সালের গুজরাত ক্যাডারের আইএএস অতনু চক্রবর্তী৷ সুভাষ গর্গের বদলি ও আগাম অবসরের আবেদনের কারণ হিসেবে শোনা যাচ্ছে, চলতি বছরের সাধারণ বাজেটের আগে থেকে সরকারের সঙ্গে গর্গের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছিল৷ হাসমুখ আধিয়ার জায়গায় কাজ করতে এসে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে নিজেকে ‘ইয়েস ম্যান’ করে তুলতে পারেননি গর্গ। আর সেই কারণেই তাঁকে বদলি হতে হল বলে অনেকের ধারণা৷
এক আমলার কথায়, ‘সুভাষজি একটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন, অর্থ মন্ত্রকের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের সচিবের পদে তাঁকে বদলি করার প্রতিবাদেই তিনি চাকরি ছাড়তে চাইছেন৷ সরকারের শীর্ষস্তরের কাছে বার্তাটি যেভাবে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন, তা রীতিমত সাহসিকতার পরিচায়ক৷ আমার ধারণা, বাজেটের পরেই ফাটলটি চওড়া হয়েছে৷ কারণ ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বাজেটের সমালোচনা করেছেন, এমনটা শোনা যাচ্ছে। এই রটনা ও পাল্টা রটনার মূল্যই চোকাতে হল অর্থ মন্ত্রকের অভিজ্ঞ আমলাকে৷’
আবার সরকারের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, এ ক্ষেত্রে তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ করে নতুন আর্থিক বিষয়ক সচিব করা হল অতনু চক্রবর্তীকে। সুভাষ গর্গ বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাজেটের যাবতীয় সিদ্ধান্তে জড়িত ছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। বাজেটের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারামনও দায় এড়াতে পারেন না। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যনও একই সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু যাবতীয় দায় অর্থসচিব গর্গের উপরেই চাপিয়ে দেওয়া হল। ‘অপমানিত’ গর্গ তাই স্বেচ্ছাবসরের কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, সঙ্ঘ-পরিবারের নেতারা আবার গর্গের এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত। রাখঢাক না করেই, গর্গকে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়ে অশ্বিনী মহাজনের কটাক্ষ, ‘আমার বিশ্বাস বিদেশ থেকে ধার করার অসাধারণ ভাবনার জন্যই ওঁকে পুরস্কৃত করা হল!’ তাঁরা যে এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে চাপ তৈরি করেছিলেন, তা স্পষ্ট করে মহাজন বলেছেন, ‘যাঁদের বললে কাজ হয়, আমরা সেখানেই জানিয়ে এসেছিলাম।’