থম মেরে রয়েছে কুমোরটুলির পরিবেশ। শ্রাবণ মাসেও দক্ষিণবঙ্গে নামেনি বর্ষা। অকাল গুমোটে অস্থির দক্ষিণবঙ্গ। রীতি মেনে রথের দিন প্রতিমা বায়না করতে কুমোরটুলি আসেন বহু বড় বড় পুজো আয়োজক। উল্টোরথেও বায়না হয় প্রতিমা। এ বছর রথে, উল্টোরথে সেভাবে প্রতিমা বায়না হয়নি। রবিবার বা ছুটির দিনে সেভাবে হাজির হয়নি পুজো উদ্যোক্তারা। আগামী ক’টি রবিবার ও ১৫ আগস্টের দিকে এখন তাকিয়ে আছেন শিল্পীরা, জানালেন কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকার। কুমোরটুলির প্রায় ২০০ ঘরে প্রতি বছর হাজার পাঁচেক দুর্গামূর্তি গড়েন মৃৎশিল্পীরা।
বহু আগেই দুর্গামূর্তি গড়ার কাজ শুরু করে দেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। কিন্তু এখনও সেভাবে অর্ডার না আসায় চিন্তিত শিল্পীরা। ধারদেনা করে বিনিয়োগ করা টাকা কতটা তোলা সম্ভব হবে, তা ভাবিয়ে তুলেছে শিল্পীদের। রঞ্জিতবাবু জানান, ভিনরাজ্য থেকে আসা অর্ডারও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। খুঁটিপুজোয় উপস্থিত অতিথিদের দেওয়ার জন্য প্রতি বছর শোলার তৈরি নানা ধরনের দুর্গা মডেল প্রচুর বিক্রি হত। গত বছরের তুলনায় এবার তার বিক্রি ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। এদিকে, অনেকটাই বেড়েছে মূর্তি কাঁচামালের দাম। প্রতি বান্ডিল খড়ের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। ১০ আটির খড়ের বান্ডিল গত বছর মৃৎশিল্পীরা কিনেছিলেন ২০০ টাকায়। এই বছর ওই পরিমাণ খড় কিনতে তাঁদের খরচ করতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাটির দাম। কমেছে পরিমাণ। এক সময় ৮ তাল মাটি পাওয়া যেত এক গাড়িতে। এখন প্রতি গাড়িতে ৬ তাল। বছর দশেক আগে লাগত ১৫০ টাকা।
রথ, উল্টো রথ কেটে গেলেও, সেভাবে দুর্গাপ্রতিমা বায়না না হওয়ায়, গুমোট গরমের মতো থম মেরে রয়েছে সমগ্র কুমোরটুলির পরিবেশ। দু’মাসের কিছু বেশি সময় বাকি রয়েছে দুর্গাপুজোর। এখনও সেভাবে প্রতিমা বায়না না হওয়ায়, ভাঁজ পড়েছে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের কপালে। হাতে সময় কম, বায়নার অপেক্ষা না করে রথের এখন ৬০০ টাকা। এক সময় এঁটেল মাটির তুলনায় বেলে মাটির দাম কম ছিল। এখন বেড়েছে বেলে মাটির দাম। আগে নৌকায় চেপে মাটির তাল নামত কুমোরটুলি লাগোয়া গঙ্গাঘাটে। এখন সড়কপথে লরিতে আসছে কুমোরটুলিতে।