বাঙালির ‘পরিচয়’কে ‘বর্ণ’হীন করার চেষ্টায় অমিত শাহের রোড শোয়ের দিন কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে বাংলা নবজাগরণের পথিকৃত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। যা নিয়ে শুধু শাসক দল তৃণমূলই নয়, সোচ্চার হন বাংলার প্রতিটা মানুষই। তার পরপরই কাটোয়ায় সমাজতন্ত্রের কারিগর লেনিনের মূর্তিতে লাল রং লেপে দিয়ে তা ভাঙার চেষ্টা করে বিজেপির গুণ্ডাবাহিনী৷ সেই যে শুরু, তারপর থেকে বিজেপি কর্মীরা যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই মনীষীদের মূর্তি ভাঙচুর করাটা যেন রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার সন্ধেয় নারায়ণগড়ে একই ঘটনা ঘটল। এবার গেরুয়া বাহিনীর শিকার বাংলার দুই গর্ব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম।
ওদিন নারায়ণগড় ব্লকের কুশবসান গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজের খতিয়ান নিয়ে স্মারকলিপি দিতে আসেন বিজেপি কর্মীরা। অফিসে বৈঠক থাকায় বিডিও বিকেলে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ফিরে বিজেপি কর্মীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন পঞ্চায়েত প্রধান শচীন্দ্রনাথ প্রধান। অভিযোগ, সন্ধেয় স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় পঞ্চায়েত কার্যালয়ের বাইরে থাকা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মূর্তির নামের ফলক ভেঙে দিয়ে যান বিজেপি কর্মীরা। কয়েক বছর আগেই যেগুলি বসানো হয়েছিল। উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এই ঘটনায় নারায়ণগড়ের তৃণমূল ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ্র বলেন, ‘বিজেপি বাংলার সংষ্কৃতি মানে না। সব মনীষীদের মূর্তি, ফলক ভাঙাই তাদের কাজ।’
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের চলার সময় কলকাতায় দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রোড শোতে বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি গেরুয়া বাহিনী ভাঙচুর করে। সেই সময় বিজেপির মূর্তি ভাঙার রাজনীতির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছিল রাজ্যের সব মহলেই। তবে নারায়ণগড়ের কুশবসান এলাকার মানুষজন রাতে বিষয়টি জানলেও লাঠি, বাঁশ হাতে বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় থাকায় কেউ সাহস করে প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে আসেননি। কিন্তু বুধবার সকালে কেউ আর ঘরে বসে থাকেননি। স্থানীয় মানুষজন মূর্তি দুটির সামনে জড়ো হয়ে বিজেপির এই কাজের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানান। পুলিশ এসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।