বিগত কয়েক বছরে গোটা দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন, নিগ্রহ এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা। এবং এর মধ্যে কিছু কিছু ঘটনার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের কিছু নেতা-নেত্রীরও। সম্প্রতি কাঠুয়া ধর্ষণ মামলাতেও মুখ পুড়েছে বিজেপির। দীর্ঘদিন এ নিয়ে বিরোধী এবং একাধিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে, অবশেষে শিশুদের যৌন হেনস্তা রুখতে পসকো আইন আরও কঠোর করছে কেন্দ্র। ঘৃণ্য অপরাধের জন্য আইন সংশোধন করে মৃত্যু দণ্ডের বিধান দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে আইনে। বুধবার ওই আইনের সংশোধন বিল নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে ব্যক্তিগত দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা অকপটে জানিয়ে দিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন।
রাজ্যসভায় ডেরেক বলেন, ‘কেবল এই কারণেই বিতর্কে অংশ নিলাম যে, আমি চাই যৌন হেনস্থার কথা শিশুরা, সাধারণ মানুষ যাতে গোপন না করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। সাংসদ, অভিনেতা, অভিনেত্রী, ক্রিকেটাররা যত এর বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তত বেশি সাধারণ মানুষ সাহস পাবেন। সে জন্য অতিশয় গর্ব আবার দুঃখের সঙ্গে আমার জীবনের একটা ঘটনা সবিস্তারে জানাতে চাই। আমার পরিবার যা জানে, তা ভারতবর্ষেরও জানা উচিত।’ এ কথা বলেই নিজের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান ডেরেক। বলেন, ‘তখন আমার ১৩ বছর বয়স। টেনিস প্র্যাকটিস সেরে বাসে করে ফিরছি। একটা শর্ট প্যান্ট আর টি শার্ট পরে ছিলাম। ভিড় বাস। কে ছিল পিছনে জানি না। কিন্তু সে আমার পিছনে চাপ দিকে থাকে। আমাকে যৌন হেনস্তা করে।’
এখানেই না থেমে ডেরেক আরও বলেন, ‘আমি আরও বিশদে বলছি। ওই লোকটি আমার শর্ট প্যান্টে বীর্যপাত করে…।’ ডেরেকের কথায়, সরকার কঠোর আইনের ব্যবস্থা করছে। তা করুক। আদালতের কাজ শাস্তি দেওয়া। কিন্তু আমাদের উচিত এই ঘৃণ্য অপরাধকে প্রতিরোধের চেষ্টা করা। যত বেশি মানুষ এর বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তত বেশি সংখ্যায় শিশুকে যৌন নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে। কারণ, এই সব নিগ্রহ ঘর থেকেই শুরু হয়। শিশুরা বলে, ‘মামা নে টচ কিয়া, কাকা নে টচ কিয়া।’ তার পর তাদের কী বলা হয়? ‘অ্যায়সা বাত মাত করো।’ বাসের ওই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার কথা আমি বলতে পারিনি শুরুতে। সাত-আট বছর পর পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছিলাম।
ডেরেক যে সংসদে দাঁড়িয়ে এ কথা বলতে পেরেছেন, সে জন্য তাঁর সাহসের তারিফ করেন মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা মনে ছাপ ফেলে যায়। ১৩ বছরের এক জন কিশোরের মনে সে দিনের ঘটনা যে কী ছাপ ফেলেছিল, ৪৬ বছর পর এক জন সাংসদের কাছ থেকে জানা গেল। ঘটনার ৪৬ বছর পর ডেরেক এ ঘটনার কথা পৃথিবীর কাছে জানিয়েছেন। আমাদের উচিত ওঁকে অভিবাদন জানানো।’ উল্লেখ্য, এদিন মোট ২৮ জন বিধায়ক পকসো সংশোধনী বিল নিয়ে কথা বলেন। অবশেষে দীর্ঘ বিতর্কের পর রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ হয়। বিলের সংশোধনীতে প্রবেশমূলক যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে ১০ বছর থেকে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে।