মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে ‘আর্থিক সংস্কারের’ নামে নামে এবার এমনই এক তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, যে ১০০ দিনের মধ্যেই তার কোপ পড়বে দেশের ৪২ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ওপর। তারপরই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। তারপরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ নিয়ে চিঠিও লেখেন তিনি। আর মুখ্যমন্ত্রীর সেই চিঠি নিয়ে এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল সাংসদদের এক প্রতিনিধিদল। বুধবার দুপুরে সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে তাঁর হাতে মুখ্যমন্ত্রীর অতীতে পাঠানো ৩টি চিঠির প্রতিলিপি তুলে দিয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার দলবেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আর্জি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুদীপ।
প্রসঙ্গত, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের অধীন কারখানাগুলিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরি হয়। বাংলায় এমন ৪টি কারখানা রয়েছে। কলকাতার আয়ুধ ভবনে সংস্থার সদর দফতর। সংস্থাটি তৈরি হয়েছিল ১৭৭৫ সালে। গোটা দেশে তাদের কর্মীসংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। মুখ্যমন্ত্রী জেনেছেন, মোদী সরকার এই সংস্থার বাণিজ্যিকীকরণ করতে চলেছে। আর বিষয়টি জানতে পেরেই প্রধানমন্ত্রীকে কড়া চিঠি লিখে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সেই চিঠির প্রতিলিপি মোদীর হাতে তুলে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা।
উল্লেখ্য, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গোটা দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে চলতি অর্থবর্ষে ৮০ হাজার কোটি টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে বিএসএনএল-এর পাশাপাশি রয়েছে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্লান্ট-সহ বাংলার মোট ১২টি সংস্থা। এর প্রতিবাদে আগেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তৃণমূলের সাংসদরা। এবার মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে সিদ্ধান্ত বদলের দাবি জানাল তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধিদল।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণ নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, এই সংস্থাগুলি দেশের সম্পদ। কাজেই সেগুলি সরকারের হাতেই থাকা উচিত। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বক্তব্য, যে সংস্থাগুলিকে সরকারের পক্ষে চালানো সম্ভব সেগুলো চালানো হবে। কিন্তু একইসঙ্গে সেগুলির বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে। সেইসঙ্গেই কমানো হবে সরকারের মালিকানার অংশ। অর্থাৎ, বিলগ্নিকরণ হবে। আর যেগুলো সরকারের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়, সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হবে। এভাবে দেশের সেনাবাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সংস্থার বাণিজ্যিকীকরণকে বেসরকারীকরণের প্রথম ধাপ হিসেবেই দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী।