“জীবন হলো সাইকেলের মতো। ভারসাম্য রাখতে হলে তোমাকে সামনের দিকে এগোতে হবে।”
– আইনস্টাইন
যে বিশেষ জ্ঞানের দ্বারা কোনো কিছু উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে তারপর সেটি প্ৰমাণ হিসেবে তুলে ধরার নামই বিজ্ঞান। যত দিন যাচ্ছে এই বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটছে। বলা চলে কোনো দেশের অগ্রগতি বা বিশ্বের অগ্রগতির মূল কাঠামোই দাঁড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের ওপর। সেই বিজ্ঞানকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে যে প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের নাম উল্লেখ করা হয় তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। জার্মান নিবাসী এই ইহুদির অসাধারণ প্রতিভা ও গুণ বিজ্ঞানে নতুন দিশা দেখিয়েছে। তবে এই মানুষটিরও জীবন ছিল অত্যন্ত কঠিন। ছিল জীবন সংগ্রাম, বেঁচে থাকার লড়াই।
পড়াশুনায় পিছিয়ে পরা ছেলে ছিলেন তিনি, অমনোযোগী এবং আনমনা। ক্লাসে কেউ তাঁর সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন তিনি। কেউ তাঁকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। ছোটবেলায় তাঁর প্রতিভার আভাস কেউ পায়নি। অবহেলাই তাঁকে বেশি গ্রাস করত। তাঁর ভালোবাসা ছিল মায়ের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর এক সঙ্গী তাঁকে সবসময় আচ্ছন্ন করে রাখত তা হল বেহালা। তাঁর অসময়ের সঙ্গী ছিল এটি। সময় পেলেই বেহালার ছড়ায় সুর তুলতেন তিনি। সেই মানুষটিকে যখন শত কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন সংগ্রামে নামতে হয়েছিল তখন সেই সময়ের এক রূঢ় বাস্তবের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। ইহুদি হওয়ার জন্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অধ্যাপনা করতে পারছিলেন না তিনি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। শেষে কেরানির জীবন শুরু হয় তাঁর। এর মধ্যেই তাঁর যাবতীয় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তার জন্য ছিল না কোনো গবেষণাগার। ছিল শুধু একটি খাতা ও পেন্সিল।
আইনস্টাইনের জীবন ছিল তাঁর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মতোই রহস্যে ঘেরা। তিনি ১০ ঘণ্টা ঘুমাতেন। বলা চলে ঘুম ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় কাজ। এর চেয়ে ঘুম কম হলে তিনি কাজ করতে পারবেন না সেটাও শোনা যায় তাঁর মুখেই। আর একটি শখ ছিল তাঁর। সেটি হল হাঁটাহাঁটি। কখনও মোজা পরতেন না। কারণ ছোটবেলায় তিনি দেখেছেন পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের কারণে মোজা ছিঁড়ে যায়।
আর ছিল ধূমপান। মনে হতো সবসময় তিনি ধোয়ায় পরিবৃত হয়ে থাকতেন। তিনি মনে করতেন ধূমপান ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাঁর সময় কাটতো গবেষণা, চিঠির উত্তর দেয়া আর ভক্তদের সাথে দেখা করার মাধ্যমে। তবে আইনস্টাইনের কাছ থেকে একটা বিষয় অবশ্যই শেখার আছে তা হলো শত বাধা বিপত্তির মাঝেও কীভাবে নিজের কাজ অব্যাহত রাখতে হয়। তাঁর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত নানা সমস্যা তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত