ষাট বছর আগে ভারত সফরে এসেছিলেন তাঁর বাবা। সে সময়ই এসেছিলেন কলকাতায়। আর তাঁর যখন ৬ বছর বয়স, তখন বলিভিয়ার জঙ্গলে নিহত হন তিনি। এবার কলকাতায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর। তবে ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। কারণ দিল্লী সেরে যেতে হবে কেরালা। কথা হচ্ছে বিশ্বখ্যাত বিপ্লবী চে গুয়েভারার কন্যা অ্যালাইদা গুয়েভারার। কিউবা বিপ্লবের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ন্যাশনাল কমিটি অব সলিডারিটি উইথ কিউবা’ এবং ‘অল ইন্ডিয়া পিস অ্যান্ড সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে চে কন্যা খোলাখুলিই জানালেন তাঁর নিজের এবং তাঁর বাবার কলকাতাপ্রীতির কথা৷
নিজে ইংরেজিতে একেবারেই স্বচ্ছন্দ নন৷ তাই পাশে দোভাষী নিয়ে যা বললেন তাঁর মমার্থ হল, ‘বাবা ১৯৫৯ সালের ৩০ জুন দিল্লীতে এসেছিলেন, তখন আমার জন্ম হয়নি৷ তিনি তখন আমাদের দেশের কাস্ত্রো মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য৷ সাত দিনের সফরে সেই সময়েই তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন, ওখানকার টাউনহলে বক্তৃতা করেন৷ বাবা দেখা করেছিলেন সেই জমানার বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে৷ কলকারখানার মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পরে বাবার কাছে অনেক গল্প শুনেছি, ওঁর ভালো লেগেছিল কলকাতা৷ আবার যাবেন বলেছিলেন, কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি…কলকাতা যাওয়ার খুব ইচ্ছে রয়েছে৷ আশা করছি আমার ইচ্ছে পূরণ হবে৷’
পেশায় ডাক্তার এবং সমাজকর্মী অ্যালাইদার কথায়, ভারত ও কিউবার মধ্যে সব থেকে বড় মিল হল, দুটি দেশই একাধিক সশস্ত্র বিল্পব দেখেছে। বাবা এসে এই দেশের সংস্কৃতির আঁচ নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ আমি এসেছি। চে নেই। কিন্তু তাঁর মতো অনেক নারীপুরুষ রয়েছেন। যাঁরা অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছেন। দুটি দেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন কতখানি রয়েছে, তার প্রমাণও দিয়েছেন চে কন্যা৷ বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতি শুক্রবার টেলিভিশন চ্যানেলে বাধ্যতামূলক ভাবে ভারতীয় সিনেমা দেখানো হয়৷ আমরা খুব উপভোগ করি৷ এতখানি প্রাণবন্ত সিনেমা যে ভালো না লেগে উপায় নেই৷’
অ্যালাইদার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কনস্টিটিউশন ক্লাবে চে-র ছবি দেওয়া টি শার্ট পরে উপস্থিত দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও সমবেত জনতা স্লোগান দেয়, ‘লং লিভ চে গ্যেভারা’৷ ঠিক যে ভাবে একদিন পুরো কিউবা জুড়ে ধ্বনিত হত- ‘ভিভা এল চে গ্যেভারা’৷ বাবার প্রতি এ হেন শ্রদ্ধা নিবেদন দেখে হাততালি দিয়ে ওঠেন ষাট ছুঁইছুই চে কন্যা অ্যালাইদা। ভেজা চোখে বলেন, ‘আমার বাবাকে ভারত এখনও এত শ্রদ্ধা করে এতটা ভালোবাসে তা এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না৷ এ বার কিউবায় ফিরে গিয়ে এখানকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরব, বলব এদেশের যাবতীয় অভিজ্ঞতা৷ থ্যাঙ্ক ইউ ইন্ডিয়া, থ্যাঙ্ক ইউ দিল্লী৷ লং লিভ ইন্ডিয়া কিউবা ফ্রেন্ডশিপ।’