১৭ তম লোকসভার প্রথম অধিবেশন বসা ইস্তক প্রায় রোজই সংসদে কোনও না কোনও বিল পেশের পর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তা পাশ করে নিচ্ছে মোদী সরকার। যা নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সাংসদদের তাঁর নির্দেশ, লোকসভায় বিরোধীদের সংখ্যা কম হলেও রাজ্যসভায় এখনও মোদী সরকার সংখ্যালঘু। তাই সেখানেই সরকারকে চেপে ধরতে হবে। তীব্র করতে হবে প্রতিবাদ। যার ফলে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। দিন কয়েক ধরেই সংসদে সরব তারা। এরই মধ্যে মুখ খুললেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে মোদী সরকার। লোকসভায় তথ্য জানার অধিকার আইন সংশোধনী বিল পাশ হতেই এই মর্মে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন সোনিয়া। তাঁর অভিযোগ, যে আইন সাধারণ মানুষ সরকারের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগায়, সেটিকে মোদী সরকার উপদ্রব বলে মনে করে। তাই মূল তথ্য জানার অধিকার আইনটির সর্বনাশ করতে চাইছে তারা। সংশোধিত বিলটি আইনে পরিণত হলে তথ্য জানানোর জন্য গঠিত সিআইসি অর্থাৎ সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশনের স্বাধীনতা খতম হয়ে যাবে বলেই ইউপিএ চেয়ারপার্সনের অভিমত।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি যেমন আজ কড়া বিবৃতি জারি করেছেন, একইভাবে বিলটি যাতে রাজ্যসভায় কোনওভাবেই সরকার পাশ করাতে না পারে, সে জন্য মমতার পথে হেঁটেই বিরোধীদের একজোট করার জন্য দলীয় সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন সোনিয়া। অন্যদিকে, রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করছে মোদী সরকার। তাঁর প্রশ্ন, বিজেপি কি তবে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে চলা সরকার (প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গর্ভনমেন্ট) করতে চাইছে?
এর পাশাপাশি, সংসদীয় রীতি, প্রথা, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোদী সরকার সংসদকে বুলডোজ করতে চাইছে বলেই মন্তব্য করেছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের উপদলনেতা সুখেন্দুশেখর রায়। উল্লেখ্য, সরকার এখনও পর্যন্ত ১৩টি বিল পাশ করেছে। লোকসভায় আসছে আরও ন’টি। রাজ্যসভায় ১৪টি। এক মাসেরও বেশি অধিবেশন হয়ে গেলেও, একটিও সংসদীয় কমিটি তৈরি হয়নি। সরকারের এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে কংগ্রেসের কটাক্ষ, কী শুরু করেছে মোদী সরকার। এক দেশ, এক ভোট, এক করের মতো এবার কি ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান সেশন’ করতে চাইছে?
উল্লেখ্য, দিন দুয়েক আগেই লোকসভায় আরটিআই সংশোধন বিল পাশ হয়েছে। এরপরেই মূল আইনটিকে দুর্বল করে দেওয়ার পাশাপাশি পরোক্ষে সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ রাখার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে ওয়াকআউটও করেছে সম্মিলিত বিরোধীরা। লোকসভায় বিজেপি একাই ৩০৩। বাকি রয়েছে শরিক দলগুলি। তাই সেখানে কোনও বিলকে আটকানো বিরোধীদের পক্ষে অসাধ্য। তবে রাজ্যসভায় রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীরা। সকলেরই এক দাবি, আরটিআই বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবিতে সোচ্চার হতে হবে। কোনওরকম স্ক্রুটিনি ছাড়া এটিকে পাশ হতে দেওয়া যাবে না।