২৪ জুলাই, ১৯৮০ বাংলা সিনেমা জগতের নক্ষত্রপতন ঘটেছিল। রুপোলি পর্দার মায়া হেলায় কাটিয়ে পৃথিবী ছাড়লেন উত্তম কুমার। আজ তাঁর ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী। উত্তম কুমার শুধু সিনেমা জগতের মহা নায়ক নন, তিনিই প্রথম বাংলা সিনেমা জগতকে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট শিখিয়েছিলেন। বাংলা সিনেমা জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি সিনেমা জগতের নক্ষত্র, এতো কিছুর পাশাপাশি তিনি বাংলাকে চিনিয়েছিলেন একটা নতুন মঞ্চ যেখানে নিজেকে মেলে ধরা যায়।
উত্তম কুমারের আজ তাঁর ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে তাঁর জীবনের কিছু মোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে নতুন করে চেনার অভিপ্রায়। তাই প্রথম জীবনে পড়াশোনা শেষ না করেই সংসারের প্রয়োজনে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে ক্লার্কের কাজে যোগ দিতে হয়েছিল উত্তম কুমারকে। তখনই আহিরীটোলায় নিজেদের থিয়েটার গ্রুপ ‘সুহৃদ সমাজ’-এ নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি। এক সময় স্টুডিয়োপাড়ায় ওই নামেই তাঁকে চিনত সবাই। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একের পর এক সিনেমা করলেও সব কটাই ফ্লপ হয়। ১৯৫৩-তে কামব্যাক ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ। যুগলবন্দি ঘরানার অন্যতম উদাহরণ। সত্যজিৎ ও উত্তম।
উত্তমকুমারকে ভেবেই ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের কেরিয়ারের ১১০তম ছবি। হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর ‘নায়ক’ দেখার পর রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। উত্তমের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন তিনি। এলিজাবেথ আসলে মুগ্ধ হয়েছিলেন উত্তমকুমারের অভিনয়ে। ১৯৭৬ সাল। তখন জরুরি অবস্থা চলছে। মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ নাম দিয়ে এক বিকল্প অনুষ্ঠান হয়। রেডিয়োতে সেই অনুষ্ঠান করেছিলেন উত্তমকুমার। তবে বাণীকুমারের জায়গায় তাঁকে মেনে নেয়নি জনতা। ওই এক বারই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রচার বন্ধ হয়েছিল। উত্তমও সরে দাঁড়ালেন বিনয়ের সঙ্গে। অভিনয় ছাড়াও পরবর্তীতে প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন উত্তমকুমার।
থিয়েটার করতে করতেই স্টুডিয়োপাড়ায় ডাক এল। কিন্তু শিকে ছিঁড়ল না একেবারেই। বরং তকমা জুটল ‘ফ্লপ মাস্টার’। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দু’টি ছোট গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রেরচিত্রনাট্য লিখেছিলেন উত্তমকুমার। একটি সুবোধ ঘোষ, অন্যটি তরুণ রায়ের লেখা গল্প অবলম্বনে।