বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর এবং কাডাপা জেলায় ছড়িয়ে থাকা শেষাচলম বায়োস্ফিয়ার প্রায় শুকিয়ে কাঠ। মারা পড়ছে বন্যপ্রাণীরা। ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অসহ্য গরম সহ্য করতে না পেরে দলে দলে বেরিয়ে আসছে জঙ্গল ছেড়ে। আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক স্টিভ লিয়াভিট দক্ষিণ এশিয়ার বিগত সাড়ে চারশো বছরের গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরন নিয়ে গবেষণা করবার পর দেখিয়েছেন, গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বৃষ্টিপাত ক্রমশই কমছে। যে কারণে জলের প্রাপ্যতা, বাস্তুতন্ত্র এবং কৃষি ক্রমশই সঙ্কটের সামনে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় ৫ বছর ধরে কার্যত বৃষ্টিহীন এই রাজ্যে চলতি দাবদাহ অতীতের প্রায় সব রেকর্ডকেই ছাড়িয়ে গেছে। বিপদাপন্ন প্রাণীদের মধ্যে আছে প্যাঙ্গোলিন এবং স্লেন্ডার লরিস, যারা জলের জন্য হাহাকার করছে। খুব সম্প্রতি লাল চন্দন কাঠ পাচার বিরোধী সংস্থার প্রহরীরা কল্যাণী বাঁধের কাছে জলের অভাবে ধুঁকতে থাকা একটি স্লেন্ডার লরিসের দেখা পেয়েছিলেন। তবে উদ্ধার করার আগেই সেটি গাছের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়।
জঙ্গলের ভেতরে শুধু যে জল শুকিয়ে গেছে তাই নয়, মাটিও শুকিয়ে খটখটে হয়ে গিয়েছে। শুকনো মাটিগুলো উঠে উঠে ঢিপি হয়ে থাকছে। জলের অভাবে ধুঁকছে প্যাঙ্গোলিন। এইসব প্রাণী ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ এশিয়াতে চোরা পথে পাচার করা হয়। সেই অর্থে এখন চোরা পাচারেও টান কারণ এই প্রাণীগুলো খাদ্য ও জলের অভাবে প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে।
তেলেঙ্গানার করিমনগরের গঙ্গাধর মণ্ডলের গাট্টুবুথোকুর গ্রামে বন্য শূকরেরা বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে জলের জন্য কুয়োর কাছে চলে আসছে। এরই মধ্যে দুটি ভাল্লুক ছানা জল খেতে এসে ধরা পড়ে যায়। করিমনগরের বনাঞ্চলে প্রায় হাজার তিনেক শ্লথ ভাল্লুকের বাসভূমি ছিল। কিন্তু পাথর খনন ও পাহাড় ধ্বংসের কারণে পশুরা আতঙ্কিত হয়ে লোকালয়ে চলে আসছে।
টুমাকুর জেলার পাভাগারা তালুকে জলের অভাবে ময়ূর, বনমুরগি, বন্য শূকর এবং বাঁদররা কাহিল। পাভাগারার খুব শুষ্ক ও পাথুরে, অনুর্বর, পাহাড়ি টিলা হনুমানাবেট্টায় হাজারের ওপর ময়ূর, সাড়ে তিনশো বাঁদর ও অন্য প্রাণীকুল একইরকমভাবে বিপন্ন। জলের অভাবে ময়ূররা মারা যাচ্ছে, অনেক বাঁদর এবং ময়ূর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে জলের জন্য হানা দিচ্ছে, কৃষকেরাও প্রাণীদের হানাদারিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। জলের অভাবে ময়ূরের মৃত্যুর খবর পেয়ে রামকৃষ্ণ আশ্রমের স্বামী জপানন্দ সেই পাহাড়ি টিলাতে অস্থায়ী আস্তানা স্থাপন করে জল সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন। ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সেই পাহাড়ি টিলায় স্বামী জপানন্দ প্রায় ১০০ ফুট উঁচু জলাধারে ডিজেল পাম্প দিয়ে জল ভরবার কাজ করে চলেছেন। প্রাণীদের এইভাবে জল খাওয়াতে দেখে গ্রামের শিশুরাও সেই সন্ন্যাসীর সঙ্গে কাজে মেতে উঠেছে। স্থানীয় কৃষক কে. আক্কালাপ্পা বলেছেন যে, “হনুমানাবেট্টার পার্শ্ববর্তী ২০টি গ্রাম থেকে ৩০ কেজি ছোলার ডাল, ১৫ কেজি জোয়ার, ১০ কেজি মটর সংগ্রহ করে পশুদের খাওয়ানো হচ্ছে”।
জলের অভাবে প্রায় হাজার খানেক সোনালি হরিণ জনবসতিতে এসে ধুঁকছে। লোকালয়ে বেরিয়ে আসা ছাড়াও ভারী যানবাহনের নীচে পড়ে চিতাবাঘেরা প্রায়শই মারা যাচ্ছে। তীব্র দহনে জলাভূমি ও জলাশয় শুকিয়ে গিয়ে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক পরিবর্তনে চিতা, শম্বর, হরিণ, নীলগাই, শ্লথ ভাল্লুক, খরগোশ, শৃগাল, নেকড়ে, বন্য শূকর, বাঁদর বন ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এই বনাঞ্চলে ৩১০টি অস্থায়ী জলাশয় তৈরি হয়েছে।