যে আইন সাধারণ মানুষ সরকারের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগায়, সেটিকেই এখন উপদ্রব বলে মনে হচ্ছে মোদী সরকারের। আর তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে দেশের নাগরিকদের সেই অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তারা। হ্যাঁ, দিন দুয়েক আগেই তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনের সংশোধন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী শিবির এবং আরটিআই আন্দোলনকারীরা। সংশোধিত আইন বলবৎ হলে আরটিআই আন্দোলন বাধা পাবে বলেই আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। আর রাজ্যের প্রবীণ প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, নতুন আইনে মুখ্য তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারদের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে এক ধাক্কায় দু’বছর কমে হয়ে যাবে তিন বছর।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে তথ্য জানার অধিকার আইন পাশ হয়েছিল। সেই আইনই সংশোধন করা হয়েছে সম্প্রতি। রাজ্যের প্রশাসনিক মহল জানাচ্ছে, সংশোধিত আইনের ‘রুল’ তৈরি হয়ে গেলে মুখ্য তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারদের কার্যকালের মেয়াদ হবে মাত্র তিন বছর। এখন তা রয়েছে পাঁচ বছর অথবা ৬৫ বছর (যেটা আগে হবে)। অর্থাৎ কেন্দ্র বা রাজ্যে মুখ্য তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ করতে হবে। কেন্দ্রই তাঁদের বেতনকাঠামো স্থির করে দেবে। ‘রুল’ তৈরির পরে সেই কাঠামো স্থির হবে।
রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রীয় আইন মানতে রাজ্য সরকার বাধ্য। তবে রাজ্যের বর্তমান মুখ্য তথ্য কমিশনার (রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব) বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দু’জন তথ্য কমিশনার জিএমপি রেড্ডি (রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি) এবং রাজ কানোজিয়ার (প্রাক্তন আইপিএস) কার্যকাল থাকবে পাঁচ বছরই। প্রবীণ আমলারা জানাচ্ছেন, মুখ্য তথ্য কমিশনার ছাড়া আরও ন’জনকে তথ্য কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করতে পারে রাজ্য। এই নিয়মে রাজ্যের তথ্য কমিশনে ফাঁকা থাকা ন’টি পদ পূরণ করতে হলে কেন্দ্রের নতুন আইন মানতেই হবে। অর্থাৎ নবনিযুক্ত কমিশনারদের কার্যকাল হবে তিন বছর। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের ধারণা, এই ভাবে আরটিআই প্রক্রিয়াটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে কেন্দ্র।