প্রেস ক্লাব কলকাতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উৎসব শুরু হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি হিসেবে আমার যে দুই তরুণ বন্ধু স্নেহাশিস ও কিংশুক এখন ক্লাব চালাচ্ছেন তাদের এতবড় একটা উৎসব আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানাই। দুঃখ একটাই, আমরা চিত্রসাংবাদিকরা এই উৎসবে ব্রাত্য হয়ে রইলাম। সাধারণ সদস্য পদ ও ভোটাধিকার দিয়ে আমাদের কেউ এই উৎসবে ডেকে নিলেন না। আগামীকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্লাবে আসবেন, তিনি যদি এই সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেন তাহলে আমরা সব চিত্রসাংবাদিকরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।
সেই আশির দশক থেকে আমার ক্লাবে আসা। তখন সদ্য চিত্রসাংবাদিকতায় এসেছি। বন্ধুবান্ধবদের মুখে শুনতাম প্রেস ক্লাবে সস্তায় মদ পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের তা পাওয়ার অধিকার ছিল না। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মদন প্রামাণিককে আমরা কয়েকজন মিলে গিয়ে সে কথা বলতে তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি ক্লাবের লোকদের বলে দেব, তোরা মাঝেমধ্যে এসে ড্রিঙ্কস নিতে পারবি। ব্যস ওটুকুই, দয়ার দান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল আমাদের। সারা ভারতে যেখানেই যাই প্রেস ক্লাবে আমাদের অবস্থা নিয়ে সেখানকার চিত্রসাংবাদিকদের উপহাসের মুখে পড়তে হয়। কারণ তারা সেখানকার প্রেস ক্লাবে আমাদের মত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নন। আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করার সময় ক্লাবের অ্যাসোসিয়েটেড মেম্বার হতে পারলাম কিন্তু ভোটাধিকার ও সাধারণ সদস্যপদ আজও অধরা থেকে গেল। স্নেহাশিস ও কিংশুককে ক্লাবের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উৎসবে আমাদের সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারটা বিবেচনা করতে অনুরোধ করছি।
প্রেস ক্লাব, কলকাতার একটা আলাদা ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব রয়েছে। সদস্যদের মধ্যে কোনরকম বৈষম্য এই ক্লাবকে মানায় না। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াসে অংশ নিয়েছে এই ক্লাব, সরব হয়েছে বহু অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের মত মানুষ এই ক্লাবে এসেছেন। এই ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেছেন বহু কৃতী সাংবাদিক। আমরা চিত্রসাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সুবিধা হওয়ার জন্যই ক্লাবের সাধারণ সদস্যপদ পেতে চাই। আমার মনে হয় ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তির এই অন্তর্ভুক্তির সবচাইতে উপযুক্ত সময়।
পেশার স্বার্থেই সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের একসঙ্গে পথ চলা দরকার। যে কোন রকম বৈষম্য আমাদের মধ্যে হীনমন্যতা ও বিভেদের জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে যে সময় নানাদিক থেকে আমাদের ওপর নানারকম আক্রমণ আসছে তখন আমাদের এক হয়ে থাকাটা আরও বেশি জরুরি। আশা করবো প্রেস ক্লাব, কলকাতার বিচক্ষণ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে একটা ইতিবাচক সমাধান সূত্র দিতে পারবে। শুরু হোক আমাদের একসঙ্গে পথ চলা।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত