লোকসভা ভোটের ফল দেখে জার্সি বদলে বিজেপিতে নাম লেখানোর হুজুগে প্রতিদিনই কেউ না কেউ গেরুয়া শিবিরে যোগ দিচ্ছেন। আর সেই সুযোগেই জেলায় জেলায় টাকা তোলার কারবার শুরু করেছে বিজেপির নিচুতলার নেতাদের একাংশ। দিন কয়েক আগেই প্রকাশ্যে এসেছে সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে শিখণ্ডী করে গেরুয়া শিবিরের এ হেন তোলাবাজির কথা। তবে তাতেও লজ্জা নেই মোদী-শাহদের। বাংলা থেকে এক কোটি সদস্য করতে হবে। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে এই টার্গেটই বেঁধে দিয়েছে দিল্লীর নেতারা। বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে অনলাইন, অফলাইন এবং মিসড কল— সব ধরনের পদ্ধতির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
মিসড কল তথা অনলাইন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে খােদ দিল্লীর সদর দফতর থেকে। কিন্তু এখানেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। গত ৬ জুলাই শুরু হওয়া এই সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অনলাইন এবং মিসড কলের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত কত মানুষ শামিল হয়েছে, কোনও এক অজানা কারণে তার হিসেব দিল্লী দিচ্ছে না। এ নিয়ে রাজ্য কমিটির এক নেতা রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে যােগাযােগ করছি, বাংলায় বিজেপির সদস্য হতে আবেদন করা মানুষের সংখ্যা জানতে চেয়ে। কিন্তু তারা যে কোনও অজুহাতেই হােক, সেই তথ্য দিচ্ছে না। কেন এমন করা হচ্ছে, সেটাও স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না।
এ নিয়ে দিলীপ ঘোষের বিরোধী গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, বিজেপির সংবিধান অনুসারে প্রতি ছয় বছর অন্তর দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজেদের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করতে হয়। পাশাপাশি নতুন সদস্য পদের জন্যও ওই নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করতে হয়। গত লোকসভার আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও বিজেপির সদস্য অভিযান শুরু হয়েছিল। আজকের বিজেপির সঙ্গে তখনকার বিজেপির আকাশ-পাতাল তফাৎ ছিল। সেই সময় এ রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক গুরুত্ব কার্যত ছিল না।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তখন কেন্দ্রীয় পার্টির কাছে গাল ভরা হিসেব কষে এ রাজ্যে ৪১ লক্ষ সদস্যের পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছিল। যার বেশিরভাগই ছিল জল। অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিংবা প্রকৃতপক্ষে মিসড কল দিয়ে সদস্য করার যে প্রক্রিয়া গােটা দেশে চলেছিল, এ রাজ্যে তার কিছুই হয়নি। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে ভুয়ো নাম কিংবা পরিচিতদের মোবাইল থেকে মিসড কল করে দায় সারা গাছের সদস্য করা হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষকে। পরবর্তী পর্যায়ে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে তথ্য-তালাশ করতে গিয়ে ঝুলির মধ্যে থেকে বিড়াল বেরিয়ে আসে।
সূত্রের দাবি, তাই এ বছর গােড়া থেকেই সতর্ক অমিত শাহ অ্যান্ড কোম্পানি। গতবারের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেওয়া রিপোর্টকে গিলতে হয়েছিল। এবার তাই খােদ দিল্লী থেকেই মিসড কল এবং অনলাইনে হওয়া সদস্যদের সার্বিক বিবরণ নিজেদের হেফাজতে রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যদিও অফলাইনের তথ্য, অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ফর্মে স্বাক্ষর করে সদস্য হওয়ার আবেদন জানান, তা রাজ্যের কাছেই রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যার প্রতিদিনের হিসেব দিল্লীতে পাঠাতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রতিটি ফর্ম যাচাই করছে, যাতে কোনোভাবে বেনো জল ঢুকে না পড়ে। এর থেকেই স্পষ্ট যে, রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি একেবারেই আস্থা হারিয়েছে দিল্লীর নেতারা।