নিজেদের তৈরি রেকর্ড ভাঙাটাই ফি বছর অভ্যাসে পরিণত করেছে তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের শহীদ দিবসের সমাবেশ। তবে এবারের একুশ ছিল ‘নতুন লড়াই’য়ের একুশ। কারণ প্রথমত রবিবার ছুটির দিন, তার ওপর উত্তরবঙ্গের একাংশে বন্যা, আর সর্বোপরি লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা, মূলত এই তিন কারণে একুশে জুলাইয়ের জনসমাগম নিয়ে তৈরি হয়েছিল প্রবল আশঙ্কা। তবে শেষমেশ সমস্ত আশঙ্কাকেই ভুল প্রমাণ করেছে এবারের ধর্মতলার সমাবেশ। ফি বছরেই মতোই এবারও রেকর্ড ভিড়ে যাবতীয় হিসেব উল্টে দিয়েছে দলের কর্মী-সমর্থকরা। আর তাতেই স্বস্তি তৃণমূল নেতৃত্বের।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে একধাক্কায় রাজ্যে বিজেপির আসন বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাত তীব্র আকার নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটমানি ফেরতের নির্দেশকে অস্ত্র করে বিজেপি জেলায় জেলায় অশান্তি পাকাচ্ছে। হিংসাত্মক কার্যকলাপ বাড়তে শুরু করেছে বিজেপির সৌজন্যে। বিশেষত, উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলায় লোকসভা আসনের নিরিখে তৃণমূল নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভের জেরে সাংগঠনিক দিক থেকেও কিছু মহলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। তার প্রেক্ষিতে এবারের একুশের জমায়েত নিয়ে সংশয় তৈরি হয় তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যেই। রবিবার ‘সফল’ জনসভা সারার পর সোমবার যথেষ্ট প্রত্যয়ী রাজ্যের শাসক দল।
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, অন্য সব জনসভার চাইতে চরিত্রগতভাবে একুশে জুলাইয়েরে সভা একেবারেই আলাদা। এটা মূলত শহীদ তর্পণ। সেই ভাবাবেগ নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতির কটাক্ষ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে রবিবার ছুটির দিন। তাই আশঙ্কা ছিল, জমায়েতে তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় মানুষের ওপর ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে। আবার রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, রাজ্যের মানুষ যে মমতামুখী, সেটা ফের প্রমাণ করে দিল রবিবারের সমাবেশ।
তিনি জানান, সভামঞ্চে বসেই একাধিক বিধায়ক, আমন্ত্রিত বিশিষ্টজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ থেকেই বোঝা যায়, যারা প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেত্রীর বক্তৃতা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তবুও সভা ছেড়ে যায়নি মানুষ। পার্থর দাবি, তাঁরা সাংগঠনিক স্তরে যে হিসেব কষেছিলেন, তা ছাপিয়ে গিয়েছে এবারের একুশের ভিড়। এর পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতির উদ্দেশ্যে তাঁর কটাক্ষ, ওঁকেই ধন্যবাদ দিতে হবে। যেভাবে কাটমানি আদায়ের অজুহাতে বাস আটকানোর হুমকি দিয়েছিলেন, তাতে তৃণমূল কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে তাঁদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিল। তারই সুবাদে এবার উত্তরবঙ্গ সহ সব জেলা থেকেই ভালো সংখ্যক মানুষ এসেছিল।
তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের সভার জমায়েতে সন্তোষ প্রকাশ করবে, সেটা প্রত্যাশিত। কিন্তু এবার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান পর্যন্ত তৃণমূলের শহীদ দিবসের সমাবেশে যে ভালো লোক এসেছিল, তা মেনে নেন। তিনি বলেন, লোকসভা ভোটের পর থেকে জেলায় জেলায় তৃণমূলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কাটমানি কেলেঙ্কারিতে তারা বেশ চাপে পড়েছে। এই অবস্থায় এবারের একুশে জুলাইয়ে যতটা খারাপ জমায়েত হবে বলে মনে হয়েছিল, তা হয়নি। অর্থাৎ, একুশে জুলাইয়ের সভাকে ‘মেগা ফ্লপ শো’ বলে বিজেপি যে দাবি করেছে, তার সঙ্গে একমত নয় বিরোধী শিবিরের একটা বড় অংশ। মান্নানের মতো আরও অনেকের মতেই এবারের একুশে জুলাই তৃণমূলকে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার উপহার দিয়ে গেল।