দ্বিতীয় বারের জন্য মোদী সরকার ক্ষমতায় আসতেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একগুচ্ছ দাবিদাওয়া পেশ করেছিল অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিল। তাদের অন্যতম দাবি ছিল, সোনার ওপর আমদানি শুল্ক কমাতে হবে এবং গোল্ড মানিটাইজেশন স্কিমটি ঢেলে সাজতে হবে। পাশাপাশি ওই স্কিমে যাতে সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হয়, তার জন্য গ্রাহকের প্রাপ্তি বা রিটার্নের অঙ্ক বাড়ানোর দাবিও করেছিলেন ওই সর্বভারতীয় সংগঠনটির কর্তারা। কিন্তু গত ৫ জুলাই যে বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সেখানে সেসব দাবির একটিও মানা হয়নি।
বাজেটে দেখা গেছে, আমদানি শুল্ক তো কমেইনি, বরং তা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, সোনার আমদানিতে রাশ টানতেই ওই শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাতে অসন্তুষ্ট শিল্পমহল। তবে সংগঠনের বক্তব্য, গোল্ড মানিটাইজেশন স্কিমটিকেই কেন সরকার আরও আকর্ষণীয় করল না, যাতে সাধারণ মানুষ উৎসাহিত হয়? তাহলে যেমন সোনার জোগানে সমস্যা হতো না, তেমন সরকারকেও আমদানি আটকাতে উঠেপড়ে লাগতে হতো না। গোল্ড মানিটাইজেশন স্কিমটি নিয়ে যাতে চিন্তাভাবনা শুরু করা হয়, তার জন্য ফের সরকারের কাছে দরবার করবে ওই সংগঠন।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন ইউপিএ সরকার সোনার ওপর আমদানি শুল্ক ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে। শিল্পমহলের চাপ সত্ত্বেও প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইউপিএ জমানার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি মোদী। তাঁর দ্বিতীয়বারের শাসনকালে সেই হার কমুক, চেয়েছিল কাউন্সিল। সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্কর সেন বলেন, যে সময় আমদানি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু সঙ্কট কাটলেও কেন্দ্র আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২.৫ শতাংশ করল। আমাদের বক্তব্য, এত চড়া আমদানি শুল্কে চোরাই সোনার রমরমা বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ফের কেন্দ্রের কাছে দরবার করব।
মোদী সরকার যে গোল্ড মানিটাইজেশন স্কিম চালু করেছিল, তার ধাঁচ কেন কেন্দ্র বদলাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছে সংগঠন। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের দাবি, যে স্কিম কেন্দ্র চালু করেছিল, সেখানে প্রায় কমেবেশি আড়াই শতাংশ হারে সাধারণ মানুষকে রিটার্ন দেওয়া হতো। কিন্তু সেই স্কিম জনপ্রিয় হয়নি। এখনও পর্যন্ত ওই প্রকল্পে মাত্র দেড় টন সোনা মিলেছে। শঙ্করবাবুরা বলছেন, মন্দিরে সঞ্চিত সোনা এবং সাধারণ মানুষের লকার বা আলমারিতে জমানো সোনার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন। সরকার যদি আমদানি রুখতে চায়, তাহলে ওই সোনা দিয়েও তো দেশের চাহিদা মেটানো যায়। কিন্তু যে পরিকাঠামোয় ওই স্কিম চালু হয়েছে, তা মোটামুটি ব্যর্থ।
এই বিষয়ে সংগঠনের তরফে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিক কেন্দ্র। তাদের সঙ্গে যোগ থাকুক ব্যাঙ্কের। সাধারণ মানুষ স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হাতে সোনা দিলে ব্যাঙ্ক তার বিনিময়ে পাসবুক ইস্যু করবে। অন্যদিকে, ওই সোনা গোল্ড লোন হিসেবে স্বর্ণকারের হাতে থেকে যাবে। তা ব্যবহার করে স্বর্ণকাররা গয়না তৈরি করবেন। সোনার মালিককে মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিল ওই জমা করা সোনার ওপর বাৎসরিক ৩.৫ শতাংশ হারে রিটার্ন দেওয়ার পক্ষপাতী বলেও প্রস্তাবে জানানো হয়েছে।