আর্থিক বিলের আড়ালে সংসদে একগুচ্ছ আইনের সংশোধনী পাশ করিয়ে নেওয়ার ফন্দি এঁটেছে কেন্দ্র! দিন কয়েক ধরেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে আসছে বিরোধীরা। কারণ চলতি অধিবেশনে সংসদের উভয় কক্ষে ডজনখানেক বিল পাশ হলেও বিল পেশ, আলোচনা ও বিরোধীদের সংশোধনী দেওয়া নিয়ে শাসক শিবির সংসদীয় নিয়ম মানছে না।
এবার সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংসের অভিযোগ করে রাজ্যসভায় মানবাধিকার রক্ষা বিল নিয়ে আলোচনার সময় ওয়াক আউট করলেন তৃণমূলের সাংসদেরা। যদিও সোমবার দিনের শেষে নির্বিঘ্নেই বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার। উল্লেখ্য, শুক্রবার বিলটি লোকসভায় পাশ হয়েছিল। সে দিন বেলা পাঁচটায় সেই তথ্য রাজ্যসভায় জানান সেক্রেটারি জেনারেল। তারপর তা রাজ্যসভায় আসে।
এই ঘটনার বিরোধীতা করে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের যুক্তি, ‘কোনও বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে বিরোধীরা যাতে সংশোধনী আনতে পারেন সে জন্য এক দিন সময় দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিরোধীদের কিছু না জানিয়েই বিলটি নিয়ে আসা হয়। তা ছাড়া, আগের দু’দিন সপ্তাহান্তের ছুটি থাকায় সংশোধনী দেওয়া সম্ভব ছিল না।’
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, ‘সংসদের বিষয় উপদেষ্টা কমিটি আসলে সময় ধার্য করা কমিটিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের লক্ষ্যই হল যত বেশি সংখ্যক বিল পাশ করিয়ে নেওয়া। কারণ বিভিন্ন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলি এখনও তৈরি হয়নি। ফলে বিল সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দায় থাকছে না সরকারের।’
চলতি বিলের সংশোধনীতে বলা হয়েছে আগামী দিনে মানবাধিকার কমিশনের শীর্ষ পদে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছাড়াও শীর্ষ আদালতের যে কোনও বিচারপতি বসতে পারবেন। এর ফলে ওই পদের গরিমা লঘু হতে চলেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের সাফাই, ‘কমিশনের শীর্ষ পদ যাতে ফাঁকা না থাকে তার জন্য ওই সিদ্ধান্ত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা পদমর্যাদায় সমান। শুধু প্রধান বিচারপতির ওপর কিছু বাড়তি দায়িত্ব থাকে।’
শুধু তাই নয়, বিরোধীদের তরফে নিয়োগে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দাবি, যে নিয়োগ কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, প্রধান বিরোধী দলের নেতা উপস্থিত থাকেন, সেই কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে নাকি প্রশ্ন তোলা অনুচিত। অর্থাৎ, ভাবখানা এমন যে প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেন সমস্ত প্রশ্নের উর্ধ্বে।
উল্লেখ্য, এই বিল নিয়ে আলোচনার আগে বেলা বারোটায় সোনভদ্রের ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিস দেয় তৃণমূল। কিন্তু চেয়ারম্যান তা না মানায় রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। যোগ দেয় কংগ্রেস-সহ প্রায় সমস্ত বিরোধী দল। অচল হয়ে যায় রাজ্যসভা। পরের দিন রাজ্যসভা বসতেই কংগ্রেস কর্ণাটক নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিস দেয়। সেটিও অগ্রাহ্য হওয়ায় কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখায়। পাশে দাঁড়ায় তৃণমূল।