লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর পর্যালোচনা বৈঠকেই তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এখন থেকে দল এবং সংগঠনের কাজে আরও বেশি করে মন দেবেন তিনি। কারণ একাধিক জনকল্যাণকর প্রকল্প চালুর পরও আসন সংখ্যা ৩৪ থেকে ২২-এ নেমে আসার পিছনে দলের জনবিচ্ছিন্নতাকেই দায়ী বলে মনে হয়েছিল তাঁর। এই কারণেই এবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে জনসংযোগের লম্বা কর্মসূচী ঘোষণা করে তাতে কার্যত ‘সীলমোহর’ দিলেন তৃণমূল নেত্রী। দলের নেতাকর্মীদের দেওয়া তিন মাসের এই কর্মসূচীর মূল সুর—‘শহর ছেড়ে গ্রামে যান। বুথে-বুথে, চায়ের দোকানে, খাটিয়ায় বসে মানুষের কথা শুনুন।’ তাঁদের উদ্দেশ্যে মমতার নির্দেশ, ‘কেউ আমাদের ভুল বুঝে থাকলে তাঁদের কাছে গিয়ে ঠিকটা বোঝাতে হবে।’
এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘আমাদের জনসংযোগ যাত্রাকে বুথ স্তরে নিয়ে যেতে চাই। রাজনীতি করতে হবে বুথে গিয়ে। চায়ের দোকানে, গরিব, তফসিলি, সংখ্যালঘু, আদিবাসী মানুষের ঘরে খাটিয়ায় বসে কথা বলতে হবে।’ আগামী ২৯ তারিখ রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য দলের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচী জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়। লড়াইয়ের ময়দানে দলকে ঘুরে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে একুশের মঞ্চ থেকে বুথস্তরের কর্মীদের একেবারে দিন-তারিখ ধরে ধরে ‘টাস্ক’ বেঁধে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সেইসঙ্গে বুথ স্তরের কর্মীদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে মমতা স্পষ্ট বলেন যে, ‘ওঁরা কেউ এমএলএ, এমপি, পঞ্চায়েতের পদাধিকারী হন না। কিন্তু তাঁরাই বড় শক্তি।’
প্রসঙ্গত, রাজ্যে রাজ্যে বুথ ভিত্তিক সংগঠন গড়েই নির্বাচনী কৌশল তৈরি করে বিজেপি। ভোটার তালিকার প্রতিটি পাতা ধরে দলের একেকজনকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের বলা হয় ‘পন্না প্রমুখ’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মমতা আসলে বুথ ভিত্তিক সংগঠনকে সক্রিয় করে এবং বুথ স্তর থেকে জনসংযোগের ওপর জোর দিয়ে এবার বিজেপির সেই ‘পন্না কৌশল’কেই টক্কর দিতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রীর গতকালের বক্তৃতায় তৃণমূলের অন্দরে শুদ্ধিকরণের বার্তাও ছিল স্পষ্ট। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এই বার্তা দেন যে, ‘টাকার জন্য রাজনীতি করবেন না। টাকার জন্য রাজনীতি করলে মানুষ গ্রহণ করে না। টাকা আসে, টাকা যায়। মানুষ বেঁচে থাকে।’ তাঁর নির্দেশ, ‘যারা টাকা নিয়ে বেইমানি করেছে তাদের চিহ্নিত করুন। এরা আমাদের লোক নয়। খোঁজ করুন, এরা কোথা থেকে এসেছে।’