মোদী জমানায় আচ্ছে দিন এসেছে দেশের ঋণ খেলাপিদের। এতদিন এই অভিযোগ তুলে এসেছে দেশের বিরোধীরা। এবং এর জলজ্যান্ত প্রমাণ বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসিরা। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, ঋণের পাশাপাশি ‘জিএসটি খেলাপি’দের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৭,৯৪৬ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) ৬,৫২০ কোটি টাকার জিএসটি ফাঁকির হদিশ পেয়েছেন কর আধিকারিকরা। সম্প্রতি সংসদে এই তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। শুধু কর ফাঁকি দেওয়াই নয়, জাল ইনভয়েস তৈরি করে গত অর্থবছরে ১১,২৫১ কোটি টাকা এবং এ বছর এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ২,৮০৫ কোটি টাকা কর ফেরতও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
গত বছরে জিএসটি আদায়ের বাজেট লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কায় ফেব্রুয়ারি মাসে সংশোধিত বাজেট অনুমানে ওই আদায়ের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা কমিয়ে আনে অর্থমন্ত্রক। কিন্তু, সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবে পূরণ হয়নি। ফলে, এ বছর রাজকোষ ঘাটতি বাজেট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে মরিয়া নির্মলা সীতারামন এখন ফাঁপড়ে পড়ে জিএসটি আদায় বাড়ানোয় জোর দিচ্ছেন।
কর আদায় বাড়াতে তাঁর প্রথম লক্ষ্যই হবে করফাঁকি বন্ধ করা। তাই, ব্যবসায়ীদের বিক্রি, জিএসটি রিটার্ন প্রভৃতি ঘেঁটে জোর কদমে তথ্য-তল্লাশি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। জিএসটি শুরুর প্রথম বছরে জাল ইনভয়েস দেখিয়ে মোট ১২.৬৭ কোটি টাকার কর ফেরত নেওয়ার মাত্র পাঁচটি ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রথম বছরে মাত্র ১২.৬৭ কোটি টাকার তছরূপ ধরা পড়লেও, দ্বিতীয় বছরে জাল ইনভয়েস (কেনার বিল) দেখিয়ে করফাঁকি দেওয়ার ১,৬২০টি ঘটনার হদিশ মিলেছে, যেখানে মোট ১১,২৫১.২৩ কোটি টাকার করফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে এর পরেও করফাঁকির ঘটনায় ইতি পড়েনি।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসেই জাল বিল তৈরি করে কর ফেরত নেওয়ার ৬৬৬টি ঘটনা সামনে এসেছে। মোট করফাঁকির পরিমাণ ২,৮০৪.৯৮ কোটি টাকা! গ্রেফতার করা হয়েছে ৪১ জন ব্যক্তিকে। জিএসটি শুরু হওয়ার পর ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের জুলাই থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৪২৪টি করফাঁকির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ১,২১৬ কোটি টাকা।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী যদিও বলছেন, ‘এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঠেকাতে কর আধিকারিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছেন এবং কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের ফিল্ড অফিসারদের ঘটনা রুখতে সতর্ক করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তবে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছে মোদী সরকার।