নবদ্বীপে পদ্মের মোহ কাটাতে মহাপ্রভুর বাণীকেই আকড়ে ধরে এগোতে চাইছেন। লোকসভা ভোটের পর থেকেই নবদ্বীপে নিজেদের জায়গা বুঝে নিচ্ছে বিজেপি। তাদের দাপটে ভাঙছে তৃণমূলের মৌরসিপাট্টা। গত ২২ বছরে এরকমটা আগে দেখেননি দলের কর্মীরা। তাই মহাপ্রভুর বাণী- ‘মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’কে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন দলের নেতারা।
শাস্ত্র বলছে, কলসির আঘাতে নিত্যানন্দ প্রভুকে রক্তাক্ত হতে দেখেও ক্রোধ সংবরণ করে দোষী জগাই-মাধাইকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নিয়েছিলেন চৈতন্যদেব। বলেছিলেন, মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না? তৃণমূল সেই আগের মতো আন্তরিকতা নিয়ে ভোটারদের পাশে থাকবে। দলের কর্মীদের মন্ত্র হল, শাসানি নয়, ক্ষমা। শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় সমাবেশে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে যে মিটিং-মিছিল করেছেন, সেখানে মহাপ্রভুর বাণীকেই আশ্রয় করেছেন তিনি। ‘মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’ এই বাণীকে অন্যভাবে হাজির করেছেন জনতার সন্মুখে। সন্ত্রাস করে নয়, বিজেপিকে ভোট দেওয়া ভোটারদের ‘ক্ষমা’র চোখে দেখে আগের মতো আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তিনি।
এ বারের লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে শুধু নবদ্বীপ বিধানসভায় তৃণমূল লিড রাখতে পারলেও সেটা কিন্তু আহামরি কিছু নয়। সামান্য সাড়ে চার হাজার ভোটের লিড ছিল তৃণমূলের। নবদ্বীপের এক বিধায়ক বলেন, “নন্দদার কৌশল একটায়, সেটা হল ভালোবাসা আর শান্তি”।
গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়া ভোটারদের ফের ঘাসফুলের দিকে মন ফেরাতে মহাপ্রভুর বাণী ফ্লেক্সে টাঙিয়ে প্রাচীন মায়াপুর-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জন-সংযোগ শুরু করেছেন মহাপ্রভুর আপনদেশের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন নবদ্বীপের চারবারের তৃণমূল বিধায়ক নন্দ অর্থাৎ পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। নিজে বৈষ্ণব না-হলেও খুবই সাদামাটা জীবন তাঁর। গরিবের বন্ধু, কাজের মানুষ বলে পরিচিত নন্দের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও দু’বার ভাবেন বিরোধীরা। নবদ্বীপ পুরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, “লোকসভা ভোটের তিন মাস আগে আমাদের বিধায়ক গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তারপর আরও দু’মাস অসুস্থ তিনি। নন্দদার নজরদারির অভাবে দল এখানে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে বিজেপি মাথাচাড়া দিয়েছে। তৃণমূল খারাপ ফল করেছে”।