বাম দূর্গের পতন ঘটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গত ৮ বছরে রাজ্যের কৃষি-শিল্প-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের হালহকিকত বদলে দিয়েছেন তিনি। রাজ্যবাসীর কল্যাণে চালু করেছেন একাধিক জনকল্যাণমুখী প্রকল্প। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি পরিবারই তাঁর চালু করা কোনও না কোনও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পেয়েছেন। এবার সেই সকল পরিবারের সরকারি সুবিধাপ্রাপকদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হল নবান্ন। সেই লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে তথ্যভাণ্ডার বা ডেটা ব্যাঙ্কও।
রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যে সব মানুষ সুবিধা পান, তাঁদের নামের তালিকা, বাড়ির ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, এমনকী ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর পর্যন্ত ওই সরকারি তথ্যভাণ্ডারে ধরা থাকবে। সরকারি সুবিধাপ্রাপক তথা বেনিফিশিয়ারিদের সম্পর্কে এই সব তথ্য জোগাড় করার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে প্রতিটি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত শীঘ্র সম্ভব সেই তথ্য জোগাড় করে পেন ড্রাইভে নিয়ে নবান্নে জমা দিতে বলা হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের যুগ্ম সচিব নীতীন সিংহানিয়া সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় আধিকারিকদের ই-মেল মারফত এ কথা জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, গত ১০ জুন নবান্নে রাজ্য প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সরকারি সামাজিক প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকদের ডেটা ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে জরুরি ভিত্তিতে সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে প্রায় ৩ কোটি মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর স্পেশাল প্যাকেজে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া শুরু হয়। পরে খাদ্যসাথী প্রকল্পে এখন রাজ্যের সাড়ে ৮ কোটির বেশি মানুষ সেই সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু খাদ্যসাথীই নয়, সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল পেয়েছেন ১ কোটি। কন্যাশ্রীর সুযোগ পাচ্ছেন ৫৬ লক্ষ ছাত্রী। শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপও মিলেছে ৭০ লক্ষ পড়ুয়ার। এছাড়া সংখ্যালঘু স্কলারশিপ ১ কোটি ৭২ লক্ষ, লোকপ্রসার শিল্পী ১ লক্ষ ৯৪ হাজার এবং বাংলার বাড়ি প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন ২৫ লক্ষ মানুষ।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপকদের মোট সংখ্যা রাজ্যের জনসংখ্যার চেয়ে অনেকটাই বেশি। যা থেকে স্পষ্ট, একাধিক সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পাচ্ছে রাজ্যের বহু পরিবারই। অথচ এ বারের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে তৃণমূল প্রায় ২ কোটি ৪৮ লক্ষ ভোট পেয়েছে। সেখানে বিজেপিও পেয়েছে ২ কোটি ৩০ লক্ষ ভোট। ফল থেকে ইঙ্গিত, ওই সব বহুমুখী প্রকল্পের সুফল ঘরে তুলতে সফল হয়নি রাজ্যের শাসক দল।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, রাজ্যের সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকদের সঙ্গে প্রশাসনের সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে বাইরের কেউ কাটমানি নেওয়ার সুযোগ না পান। দরকার হলে প্রশাসনের তরফে তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে অথবা ফোন করে জানতে চাওয়া হবে, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে তাঁরা কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না।