প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে প্রবল বৃষ্টিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে আসামের বন্যা পরিস্থিতি। এখনও ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র-সহ অন্যান্য নদীগুলি। রাজ্যের ৩৩টি জেলার মধ্যে ৩০টি জেলাই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে বিপর্যস্ত রাজ্যের জনজীবন। প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ যেমন ঘরছাড়া, তেমনি ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-এ।
তবে শুধু মানুষ নয়, সমস্যায় পড়েছে বন্যপ্রাণীরাও। কারণ আসামের বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে। জানা গেছে, কাজিরাঙার প্রায় ৯০ শতাংশ বনই জলের তলায় চলে গেছে। ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে অনেকটা উপর দিয়ে বইছে বন্যার জল। কোথাও কোথাও এই বন্যার জল ৩ ফুট পর্যন্ত উঠে গিয়েছে। ১৯৯টি অ্যান্টি-পোচিং ক্যাম্পের মধ্যে ১৬৯টি ক্যাম্পই এখন জলের তলায়। যার ফলে ৫০টিরও বেশি পশু বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে বলে খবর।
শুধু তাই নয়। আশ্রয়ের খোঁজে জলে ভেসে ভেসে রাজ্যের নানা প্রান্তে গিয়ে ঠেকছে বাঘ, হরিণ। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতির দল। গতকালই প্রকাশ্যে এসেছে, স্থানীয় বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে খাটের ওপরে আশ্রয় নিয়েছে একটি বাঘ। আবার সম্প্রতি পরভিন কাসওয়ান নামে বন দফতরের এক আধিকারিক একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, একগলা জল পেরিয়ে যাওয়ার সময় করুণ মুখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে পাঁচটি হরিণ। কাজিরাঙার নিরাপদ আশ্রয়ে জল ঢুকে পড়ায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে তারা। তাই প্রাণ বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েছে এক টুকরো উঁচু জমির সন্ধানে।
এরই মধ্যে এবার জলে ডুবে মারা গেল কাজিরাঙা অভয়ারণ্যের দু’টি একশৃঙ্গ গন্ডার। একটি গন্ডারের দেহ উদ্ধার হয়েছে পার্কের বাইরে থেকে। পাশাপাশি, একটি হাতি, একটি হরিণ ও দু’টি বুনো শুয়োরের দেহও উদ্ধার হয়েছে। তাদেরও জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া কাজিরাঙা অরণ্য একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। সারা পৃথিবীতে অবশিষ্ট এই প্রাণীটির দুই তৃতীয়াংশই এই অরণ্যে অবস্থিত। এই বন্যার পরে সেই সংখ্যাটা অনেকটা ধাক্কা খাবে বলেই আশঙ্কা সকলের।