ক্ষমতায় এসেই বাংলার শিল্প-স্বাস্থ্য-শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রকেও খোলনলচে বদলে ফেলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজর দিয়েছিলেন কৃষকদের উন্নতিতেও। এই কারণে কৃষকবন্ধু প্রকল্পও এনেছেন তিনি। এবার ফড়েরাজ ঠেকাতে এই প্রকল্পই হাতিয়ার হয়ে উঠল।
জানা গেছে, সরকারের কাছে ধান বিক্রির প্রক্রিয়ায় ফড়েদের আটকাতে কৃষকবন্ধু প্রকল্পটিকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের খাদ্য দফতর। আগামী অক্টোবর মাস থেকে শুরু হতে চলা নতুন খরিফ মরশুমে এই ব্যবস্থা চালু করতে চায় তারা। কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করা গেলে চাষিদের নাম ব্যবহার করে ফড়েদের সরকারের কাছে ধান বিক্রি বন্ধ করা যাবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
প্রসঙ্গত, খোলাবাজারের তুলনায় সরকার বেশি দামে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয় একশ্রেণীর ফড়ে। তারা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে তা বেনামে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে বেশি দামে বিক্রি করে। এটা বেশ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মরশুমে মোটা ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১৫৫০ থেকে ১৫৭০ টাকা। যেখানে খোলাবাজারে দাম ১৪০০-১৫০০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে।
ফড়েরা চাষিদের বাড়ি গিয়ে খোলাবাজারের থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করলে মোটা টাকা মুনাফা হয়। এবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে নতুন আমন ধান ওঠার পর সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে ফড়েদের ব্যাপক তৎপরতার অভিযোগ ওঠে। তারপরই পুলিশ জেলায় জেলায় বিশেষ অভিযানে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং ধান আটক করে।
এবার তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ফড়েদের আটকাতে চাইছে খাদ্য দফতর। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেওয়ার জন্য চাষিদের জমির খতিয়ান সহ বিভিন্ন নথিপত্র পেশ করতে হয়। চাষির নাম, ঠিকানা, জমির বিবরণ সব কিছুই কৃষি দফতরের তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে। ওই তথ্যভাণ্ডার খাদ্য দফতর নিয়ে নিজেদের পোর্টালে আপলোড করে নেবে।
সব সরকারি স্থায়ী ও অস্থায়ী ধান ক্রয়কেন্দ্রে ইন্টারনেট-সহ কম্পিউটার থাকে। কোনও চাষি ধান বিক্রি করতে এলেই ওই তথ্যভাণ্ডার থেকে তাঁর নাম-ঠিকানা বের করে তিনি কত পরিমাণ ধান বিক্রি করলেন, সেটা নথিভুক্ত করে নেওয়া হবে। প্রান্তিক ও ছোট চাষিরা যাতে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন, সেটাই সরকারের মূল লক্ষ্য। এই কারণে ধান বিক্রির ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
চলতি বছরেই সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৯০ কুইন্টাল। কোনও বড় চাষি ৯০ কুইন্টালের বেশি ধান একাধিক কেন্দ্রে বিক্রি করলে তা ধরার কোনও সুযোগ এতদিন ছিল না। এবার কৃষকবন্ধুর তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করায় সেই সুযোগ আর মিলবে না। এতে আরও বেশি ছোট ও প্রান্তিক চাষি সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন বলে খাদ্য দফতরের কর্তারা আশা করছেন।