বেশ কয়েক বছর আগের কথা। হঠাৎই আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে যায় টালিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওর একটা অংশ। তৎকালীন বাম সরকার এই মুমূর্ষুপ্রায় স্টুডিও চালানোর দায়িত্ব আর নিতে চায়নি। ফলে সেই জায়গায় নতুন মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির কথা ঘোষণা করে দিয়েছিল। কিন্তু রুখে দাঁড়ালেন টালিগঞ্জেরই শিল্পীরা আর তার সঙ্গে কিছু শুভানুধ্যায়ী। ফলে আগুনে পুড়ে যে ইতিহাস বিস্মৃতপ্রায় হতে চলার কথা ছিল, তা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পরিচালনায় নতুন উৎসাহ আর উদ্যমে কাজের পরিধি বাড়িয়ে চলেছে।
বেশ কয়েক বছর হল পাল্টে গেছে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওর পরিবেশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয় উদ্যোগে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় খোলনলচে পাল্টে গেছে এই স্টুডিওর ছ–ছটা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্টুডিও ফ্লোর, যেখানে বছরভরই শুটিং চলে নানা ধারাবাহিকের। এখন এই স্টুডিওয় দেবানন্দ সেনগুপ্ত অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এবার নতুন বিলের ফলে এই স্টুডিওর জন্য গঠিত হবে বোর্ড। থাকবেন একজন সিইও। ফলে এই স্টুডিওর আরও উন্নতির সম্ভাবনা দেখছেন কর্মরত কলাকুশলীরা। একই কথা শোনা গেল ফেডারেশন ফর সিনে টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্কার্স–এর সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা ঘটকের কণ্ঠে। তিনি বললেন, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে অনেক কাজ হয়েছে এখানে। ঝাঁ–চকচকে আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে স্টুডিও ফ্লোরে। নতুন বোর্ড তৈরি হলে আরও উন্নতি হবে, সন্দেহ নেই।
১৯৫২ সালে তৈরি হয় এই টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও। কেমন ছিল তার অবস্থা? একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে একটা মজে–যাওয়া পুকুরকে ঘিরে কয়েকটা বাড়ি আর গুদামঘরের মতো ফ্লোর। আলো–বাতাসের অভাব। কলাকুশলীদের কাজ করতে হত বিভিন্ন অসুবিধের মধ্যে। একটা দমবন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সর্বত্র।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হস্তক্ষেপে এখন সেখানেই ঝকঝকে স্টুডিও। যেখানে ছিল শুটিংয়ের জন্যে মাত্র তিনটি ফ্লোর। এসি ছিল না। এখন সেখানে ছ’টি এসি ফ্লোর। এই ৬ ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে বাংলা সিনেমার ছয় মহারথীর নামে— উত্তমকুমার, তপন সিংহ, সুচিত্রা সেন, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঢেলে সাজা হয়েছে স্টুডিওর পুরো চত্বর। সঙ্গে আছে একটা বাতানুকূল কনফারেন্স রুম, ক্যান্টিন, আর আর্টিস্ট ফোরাম ও ফেডারেশনের অফিস।
প্রায় দু’ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই স্টুডিওয় রয়েছে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও। আর রয়েছে সুন্দর করে সাজানো বাগান। সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। কিন্তু একটা সময়ে তো কাজ প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল এই টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে। এখন সেই কাজের পরিবেশ কী রকম? জানা গেল, মাসের দ্বিতীয় রবিবার ছুটির দিন স্টুডিওতে। এ ছাড়া বাকি দিনগুলোয় শুটিং হয় ফ্লোরগুলিতে। কনফারেন্স রুমে বিভিন্ন মিটিং হয়। তবে একটা দিনও কাজ ছাড়া এই স্টুডিও কাটায় না।