তেন্ডুলকর, লিয়েন্ডার পেজ অথবা জোসে ব্যারেটো বলতেন বয়স তো ‘সংখ্যার’ মত। ‘ফর্ম’ এবং ‘ক্লাস’–ই হল আসল। সুতরাং বয়স নিয়ে অহেতুক মাতামাতি করার কোনও অর্থ হয় না। তিনিও নিশ্চয়ই এমনই বলে থাকেন। ৩৮ তো কী হয়েছে? কোর্টে নড়াচড়ায় কোনও খামতি রয়েছে? না, নেই। রবিবারের সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে একটা লড়াই দেখে মনে হতে বাধ্য ওপরের কথাগুলো। ঠিক যেন আহত বাঘ। প্রথম সেটে খোঁচা খেলেন বিশ্বের এক নম্বরের কাছে। ফেরত দিলেন দ্বিতীয় সেটে। প্রথম সেটে ‘বুড়ো’ রজার ফেডেরার উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে নোভাক জকোভিচের কাছে লড়তে লড়তে নিয়ে গেলেন ৬–৬ গেমে। টাই–ব্রেকারে শেষ পর্যন্ত জিতলেন জকোভিচ। টাই ব্রেকারের ফল তাঁর পক্ষে ৭–৬। সেন্টার কোর্টে মহাকাব্যিক ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়ন হলেন নোভাক জোকোভিচ। খেলার ফল জোকারের অনুকূলে ৭-৬, ১-৬, ৭-৬, ৪-৬, ১৩-১২।
নোভাক জমিয়ে দিলেন দ্বিতীয় সেটে। তিনি দেখিয়ে দিলেন কাকে বলে প্রত্যাবর্তন। উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে রজার দেখালেন তিনি বিপক্ষকে যেকোনও সময় উড়িয়ে দিতে পারেন। একেবারেই ফুরিয়ে যাননি। অবিশ্বাস্য! মাত্র ২৫ মিনিটে দ্বিতীয় সেটে ৬–১ গেমে হারালেন জকোভিচকে। এরপর তৃতীয় গেমে আবার ফিরে আসেন জকোভিচ। ট্রাইবেকারে ৭–৬ (৭–৪) গেমে ওই সেট জিতে নেন জোকার। কিন্তু উল্টোদিকের লোকটার নাম রজার ফেডেরার। আর তাই ৩৮ বছর বয়সেও চতুর্থ সেটে লড়াইয়ে ফেরেন। ৬–৪ গেমে জিতে ফেলেন চতুর্থ সেট। কিন্তু ‘রাজা রজার’–এর জন্য হয়ত অতটা দয়া ছিল না টেনিস ঈশ্বরের মনে। আর তাই তো পঞ্চম সেটও ট্রাইবেকারে গড়াল। তবে হাল ছাড়েননি সুইস তারকা। শেষপর্যন্ত ১৩–১২ (৭–৩) ফলে শেষ সেটটি জিতে কেরিয়ারের পাঁচ নম্বর উইম্বলডন ট্রফিটি জিতলেন ‘জোকার’। যদিও হারলেও ‘বৃদ্ধ রজার ফেডেরার’–এর এই লড়াই মনে রেখে দেবে টেনিসবিশ্ব।
খেলার শেষে ফেডেরার বলেন, ‘‘এই ম্যাচটা আমি ভুলে যেতে চাইব। দুর্দান্ত একটা ম্যাচ হল। আমি জেতার সুযোগ পেয়েছিলাম। নোভাকের কাছেও সুযোগ এসেছিল। শেষে জিতল নোভাক। আমি খুশি। তবে নোভাক গ্রেট।’’ এরকম দীর্ঘ একটা ম্যাচ খেলার পরেও যে তিনি ঠিক মতো হাঁটতে পারছেন, সেই প্রসঙ্গে মজা করে ফেডেরার বলেন, ‘‘আমি সুস্থ বোধ করছি। আমি এখন ঠিক ভাবে দাঁড়াতেও পারছি।’’ এই দুই প্রতিপক্ষ যত বারই মুখোমুখি হয়েছে, তত বারই তাঁদের র্যাকেট ঝলসে উঠেছে। যেভাবে ফেডেরার গোটা ম্যাচ ধরে দাপট দেখালেন গতকাল, তাঁর এই লড়াইয়ের রুপকথা বহুদিন মনে রাখবেন সাধারণ মানুষ।