গত শনিবার শহর কলকাতা প্রত্যক্ষ করেছে মৃত্যু ঠিক কতটা মর্মান্তিক হতে পারে। মেট্রোয় হাত আটকে প্রাণ হারিয়েছে নন্দন চত্বরে লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করা সজলকুমার কাঞ্জিলাল। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই হার্টফেল করেন তিনি।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মারা গিয়েছিলেন সজল কাঞ্জিলাল। এমনটাই জানা গেল ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। পুড়ে যাওয়ার দাগও মিলেছে তাঁর শরীরে। চিকিৎসকেরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর হার্ট। মারা যান তিনি। তবে তাঁর মাথার ডান দিকে, ঘাড়ের ডান দিকে এবং ডান হাতে চোটের চিহ্ন আছে। আঘাত আছে কোমরে, বুকে, পায়ে। কোনও হাড় অবশ্য ভাঙেনি বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে মাথার বাম পাশে তীব্র আঘাত লাগায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছিল সজলবাবুর। কানের পাশেও ক্ষত রয়েছে তাঁর।
চলন্ত ট্রেনে হাত আটকে যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মেট্রো-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারায় অর্থাৎ গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটানোর মামলা করেছে পুলিশ। থানায় এই অভিযোগই এনেছেন মৃত সজলকুমার কাঞ্জিলালের আত্মীয়স্বজন। গাফিলতির বেশ কিছু নমুনা পুলিশ থেকে সাধারণ মেট্রোযাত্রীদের চোখে উঠে আসছে। এবং তা বেরিয়ে আসছে প্রশ্নের আকারে। পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে দরজায় ঝুলন্ত যাত্রীকে নিয়ে ট্রেন বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটি কি শনিবার সন্ধ্যায় তখনই কারও চোখে পড়েনি? ওই প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ প্রান্তে রেলরক্ষী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি কেন? যাত্রীকে ঝুলতে দেখে গার্ডই বা কেন ট্রেন থামালেন না? দরজায় ঝুলন্ত যাত্রীর ‘অস্বাভাবিক’ স্পর্শ সত্ত্বেও ট্রেন চালু হল কী ভাবে? অর্থাৎ প্রযুক্তিগত ত্রুটি-গাফিলতি এবং উদাসীনতা-গাফিলতির অজস্র কাঁটা। সেই কাঁটায় বিদ্ধ মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। চালক-গার্ডদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মেট্রো নিজেদের বক্তব্য রেল নিরাপত্তা কমিশনারকে জানাবে। আজ, সোমবার এসে তদন্ত করবেন ওই কমিশনারই। চালক-গার্ডদেরও তাঁর সামনে হাজির হতে হবে।
শনিবার সন্ধে ছ’টা ৪০ নাগাদ কবি সুভাষগামী মেট্রোতে পার্কস্ট্রিট ছাড়ার পর সজল কাঞ্জিলাল নামের এক যাত্রীর হাত আটকে যায় দরজায়। শরীর ঝুলতে থাকে বাইরে। সেই অবস্থাতেই প্রায় ৬০ মিটার এগিয়ে যায় ট্রেন। শেষে লাইনে মুখ থুবড়ে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে ডাউন লাইনের বিদ্যুৎ বন্ধ করে সেখানে ছুটে যান মেট্রোর নিরাপত্তারক্ষীরা। ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ট্রেন টানেলের মধ্যে আটকে যাওয়ায় চালকের কেবিন দিয়ে বাকি যাত্রীদের বার করে নিয়ে আসা হয়।