৭ দফায় বঙ্গে শেষ হয়ে যাবে তৃণমূল। এই ছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের হুঁশিয়ারি। কিন্তু মুকুলের সেই হুঁশিয়ারির পর সময় গড়িয়েছে কিন্তু দফা আর এগোয়নি। বরং যারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা ফের একে একে ফিরে আসছেন তৃণমূলে। চলছে ‘ঘর ওয়াপসি’। হালিশহরের পর কাঁচরাপাড়াতেও অব্যাহত সেই ধারা। শনিবার তৃণমূল ভবনে কাঁচরাপাড়ার ৯ দলত্যাগী কাউন্সিলরকে দলে ফিরিয়ে মুকুলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, অনেকেই ওঁকে বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য বলে থাকেন। কিন্তু সেই চাণক্য নিজের পাড়ার কাউন্সিলরদেরই আটকে রাখতে পারেন না। উনি এখন আর চাণক্য নন, মেড ইন চায়না।
প্রসঙ্গত, শনিবার কাঁচরাপাড়ার চেয়ারম্যান সুদামা রায় এবং ভাইস চেয়ারম্যান মাখন সিনহা-সহ মোট ন’জন তৃণমূলে ফিরে আসেন। তাঁদের মধ্যে এক নির্দল কাউন্সিলরও ছিলেন। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন কাঁচরাপাড়া পুরসভার পাঁচ কাউন্সিলর। এ দিন আরও ন’জন ফিরে আসায় কাঁচরাপাড়ার ২৪টি ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯, যা ম্যাজিক ফিগার ১৩-র চেয়ে বেশ খানিকটাই বেশি। ফলে গতকাল বিকালেই, ‘ঘর ওয়াপসি’ হওয়া ওই কাউন্সিলদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে কাঁচরাপাড়া পুনর্দখলের কথা জানান অভিষেক।
গত ২৩ মে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর, গত ২৮ মে কাঁচরাপাড়ার ওই কাউন্সিলররা দিল্লীতে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। দলবদলের এই পুরো পরিকল্পনাটাই মুকুল রায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে শুরু থেকেই জল্পনা ছিল রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু দেড়মাস কাটতেই ওই বিধায়করা দলে ফিরে আসায়, গতকাল নাম না করে মুকুলকে তীব্র কটাক্ষ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘এক জনকে চাণক্য বলে অভিহিত করেছিল কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম। কিন্তু দেড় মাস কাটতেই তো ১৪ জন ফিরে এলেন। নামের আগে একটা মেড ইন চায়না বসান। এই চাণক্য মেড ইন চায়না।’
১০৭ জন তৃণমূল বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন বলে সম্প্রতি দাবি করেছিলেন মুকুল রায়। সেই নিয়েও তাঁকে বিদ্রূপ করেন অভিষেক। বলেন, ‘নিজের পাড়ার কাউন্সিলরকে যিনি রক্ষা করতে পারেন না, দল ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েও রাখতে পারেন না, তিনি আবার ১০৭টা বিধায়কের কথা বলছেন। লজ্জা হওয়া উচিত। এক কাজ করুন ২৯৪ই বলে দিন। কথায় বলে না, ঘরে নেই নুন, ছেলে আমার মিঠুন। আসলে এক শ্রেণীর রাজনীতিকদের স্বভাবই হল মিথ্যা বলে দিল্লীর কাছে নম্বর বাড়ানো।’ যে বা যাঁরা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁরা কেউই স্বেচ্ছায় যাননি বলেও দাবি করেন অভিষেক।
তাঁর অভিযোগ, ‘ওই বিধায়কদের যখন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাজ্যে তখনও নির্বাচনী বিধিনিষেধ চালু ছিল। কোনও ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকাই ছিল না। তাই ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তৃণমূল নেতাদের বাধ্য করা হয় বিজেপিতে যোগ দিতে। কারও ছেলেকে মেরে, কারও স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে, জোর করে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয় সকলকে। নিজে থেকেই ফিরে আসতে চেয়েছিলেন ওঁরা, তাই ফিরিয়ে নিয়েছি।’ তাঁর দাবি, ভাটপাড়ার যে সমস্ত তৃণমূল নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তাঁরাও দলে ফিরে আসবেন। অন্যদিকে, কাঁচরাপাড়ার পাশাপাশি, গতকাল দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের দলত্যাগী ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জনও ফিরে আসেন তৃণমূলে। তাতে ১৮ সদস্যের ওই বিধানসভা পরিষদে ১১ সদস্য নিয়ে ফের সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল।