গতবছর ফুটবল বিশ্বকাপের সময় আমরা লক্ষ্য করেছিলাম যে, ফ্রান্স দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। তাঁরা জন্মসূত্রে আফ্রিকার হলেও, পরে ফ্রান্সে এসে বসবাস শুরু করে এবং সেখানকারই নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। এবার ঠিক তেমনটাই দেখা গেল ক্রিকেট বিশ্বকাপের মঞ্চেও।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এবারের ইংল্যান্ড টিমেও ৭ জন খেলোয়ার আছে, যারা আদতে জন্মসূত্রে অন্য দেশের। একইসঙ্গে তাঁদেরকেই ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার মূল কারিগর বলা যেতে পারে। এই বার নিয়ে চতুর্থ বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ড। এই ইংল্যান্ড দলেই অধিনায়ক-সহ ৭ জন ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁদের শিকড় অন্য দেশে। এ সব দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি বিশ্ব একাদশ? নাকি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ একাদশ? যদিও তাঁদের কথায় বিশেষ আমল দেননি কেউই। সেই ৭ জন কারা? জেনে নিন, তাঁদের পরিচয়।
প্রথমেই নাম আসবে ইংল্যান্ড অধিনায়কের। ক্যাপ্টেন ইয়ন মর্গ্যান ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা শুরু করেন। এই নিয়ে পরপর ৩টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তারপরেই নাম আসবে ইংল্যান্ডের বিধ্বংসী ওপেনার জেসন রয়ের। আদতে তাঁর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০১৪ সাল থেকে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলছেন রয়। তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের দৌলতে ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠেছে। শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের এই ওপেনারের উপরেই ভরসা করে রয়েছে গোটা ইংরেজ বাহিনী। অলরাউন্ডার হিসেবে বিখ্যাত বেন স্টোকস। সেও জন্মেছে অন্য দেশেই। নিউজিল্যান্ডে জন্ম হলেও বর্তমানে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার তিনি। ২০১১ সাল থেকে ইংল্যান্ডের হয়ে নিয়মিত খেলছেন স্টোকস।
ইংল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার মইন আলি। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটারের ব্যাট ও বলের দিকে তাকিয়ে গোটা ইংল্যান্ড। ২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে নেতৃত্ব দেন মইন। সে বার ইংল্যান্ড শেষ চারে পৌঁছেছিল। টেস্ট ক্রিকেটে গ্রেম সোয়ানের জায়গা নেন মইন। মইন আলির সঙ্গী আদিল রশিদও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে আদিলের। এখন তিনি ইংল্যান্ডের অন্যতম ভরসা।
অইন মর্গ্যানের হাতের অন্যতম তাস জোফ্রা আর্চার। সেও কিন্তু অন্য দেশেরই। আদতে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হলেও, চলতি বছরের মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম খেলেন আর্চার। এখন তিনি দলের অন্যতম ভরসা। এছাড়াও বাবা খেলেছেন এক দেশের জার্সিতে। ছেলে খেলছেন অন্য দেশের হয়ে। এমন নজিরও আছে। আর ঠিক এমনটাই ঘটেছে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার টম কুরানের সঙ্গে টমের বাবা কেভিন কুরান খেলেছিলেন জিম্বাবোয়ের হয়ে। ২৪ বছরের অলরাউন্ডার টম ১৭টি ওয়ানডেতে ১৭৮ রান করেছেন। উইকেট-সংখ্যা ২৭। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে জন্মানো টম এখন বিশ্বের অন্যতম তরুণ প্রতিভা।
গত বছর ফ্রান্স ফুটবলে বিশ্বকাপ জিতেছিল এবং সেই দলেরও অনেকেই জন্মসূত্রে অন্য দেশের ছিলেন। ঘটনাচক্রে ইংল্যান্ডের সঙ্গেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে। তবে দেখার বিষয় হলো, ফ্রান্সের মতো ইংল্যান্ডও কি কাপ জিতবে? এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।