বালুরঘাট থেকে হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা, শিলিগুড়ি ও মালদায় নিয়মিত ট্রেন রয়েছে। অথচ লোকসভায় বাংলার মমতা সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে গিয়ে মোদী সরকারের রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলে বসলেন, ‘ওই প্রকল্প আটকে রয়েছে জমি সঙ্কটে।’ যার অর্থ, একলাখি থেকে বালুরঘাট অবধি নাকি ট্রেনই চালু হয়নি!
শুধু তাই নয়, সব গুলিয়ে ফেলে রেলমন্ত্রী বাংলার একাধিক চালু রেল প্রকল্পের নাম নিয়ে এমনও দাবি করলেন যে, সেগুলি নাকি চার-পাঁচ দশক ধরে আটকে রয়েছে। বললেন, ‘রাজ্য সরকার জমি না দেওয়ায় মাঝপথে বন্ধ হয়ে রয়েছে হাওড়া-আমতা, বালুরঘাট-একলাখি এবং তমলুক-দীঘা রেলপথ নির্মাণের কাজ।’ অথচ এই সবকটি রুটেই দিব্বি চালু রয়েছে রেল পরিষেবা।
আসলে গোয়েলের উদ্দেশ্য ছিল, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দেওয়া। কিন্তু, মন্ত্রীকে তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়ে অস্বস্তিতে ফেললেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সব শুনে তিনি বলে ওঠেন, ‘আমি রেলমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, তিনি একলাখি থেকে বালুরঘাট পর্যন্ত ট্রেনে সফর করুন৷ তাঁর ভালো লাগবে৷ এই প্রকল্প শেষ হয়ে গিয়েছে বহু আগে৷’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত অবধি লোকসভায় রেল বাজেট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলে। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন দলের মোট ৯৯ জন সাংসদ। ছিলেন তৃণমূলের সাংসদরাও। ওদিন জবাবি ভাষণ দিচ্ছিলেন রেলমন্ত্রী। ভাষণের শেষ পর্যায়ে বাংলার প্রসঙ্গ তুলে গোয়েল বলেন, বাংলায় হাওড়া-আমতা রেল প্রকল্পটি সেই ১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে অসমাপ্ত হয়ে রয়েছে।
একই ভাবে আটকে রয়েছে বড়গাছিয়া-চাঁপাডাঙা, একলাখি-বালুরঘাট এবং দীঘা-তমলুক প্রকল্পটি। মন্ত্রী বলেন, ‘দীঘা-তমলুক রেলপথটি ১৬৮ কিলোমিটারের। যার মধ্যে ৮০ কিমির কাজ মাঝপথে আটকে রয়েছে, কারণ রাজ্য সরকার জমি দিচ্ছে না। রেলের টাকার অভাব নেই। রাজ্য সরকার জমি দিলেই কাজ সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে গত ১৫ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছি।’
এরপরেই গোয়েলকে ‘ভুল’ ধরিয়ে দিয়ে সুদীপ বলেন, ‘আপনাকে বাংলায় আমন্ত্রণ রইল। আসুন। বালুরঘাট-একলাখি ট্রেনে চড়ে ঘুরে আসবেন। ওটা চালু প্রকল্প।’ কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী জানিয়েছেন, ‘তমলুক-দীঘা রেলপথ আগেই চালু হয়েছে। মন্ত্রী ভুল বলেছেন। তমলুক-দীঘা রেলপথ জলেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্য সরকার জমি দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, উড়িষ্যায় জমি সমস্যার জন্য প্রকল্পটি আটকে রয়েছে।’
অন্যদিকে, এর পাশাপাশি হাওড়া-আমতা রেলপথও চালু রয়েছে বলেও জানিয়ে দেন আলোচনায় উপস্থিত তৃণমূল সাংসদরা। সুদীপের টিপ্পনীর পরই এ বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটেন গোয়েল। জবাব দেওয়ার সময় আর বাংলা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি৷