তাঁর অভিনয়ে গুনমুগ্ধ বাঙালি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেড়িয়ে গেলেও সপ্তপদী, কাবুলিওয়ালা, সবার উপরে, জলসাঘর, কখনো পুরোনো হবে না। বাঙালির মননে থেকে যাবে আজীবন। বাঙালির মনে এমন আরও ছবির সংলাপ স্পষ্ট হয়ে রয়েছে শুধু ছবি বিশ্বাসের অভিনয়ের গুণে। গিরিশ-যুগের অভিনয়ের ধারাটি শিশির ভাদুড়ি বা অহীন্দ্র চৌধুরী সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিই। আজ সেই মহান অভিনেতার জন্মদিন।
একই মঞ্চে, একই ধারায় তাঁদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস। কিন্তু সর্বত্রই বজায় ছিল তাঁর স্বকীয়তা। মন্মথ রায়ের ‘মীরকাশিম’ নাটকে ছবি বিশ্বাস নাম ভূমিকায় অভিনয় করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। এ তো গেল মঞ্চের কথা। চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় প্রসঙ্গে স্বয়ং সত্যজিত্ রায় বলেছিলেন, “ছবিবাবু না থাকলে ‘জলসাঘর’-এর মতো চিত্ররূপ দেওয়া সম্ভব হত কিনা জানি না। বোধ হয় না। এক দিকে বিশ্বম্ভর রায়ের দম্ভ ও অবিমৃষ্যকারিতা, অন্য দিকে তাঁর পুত্রবাৎসল্য ও সঙ্গীতপ্রিয়তা এবং সব শেষে তাঁর পতনের ট্র্যাজেডি— একাধারে সবগুলির অভিব্যক্তি একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল”। মঞ্চ থেকে ছবি, ছবি থেকে আবার মঞ্চ— দাপটে চালিয়ে গিয়েছেন ছবি বিশ্বাস নিজের অভিনয় জীবন। আর তাই ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নাটকটির উৎসর্গ পত্রে তাঁকে ‘নট সম্রাট’ নামে অভিহিত করেছিলেন মন্মথ রায়।
পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ভারতবর্ষের ‘বেস্ট স্ক্রিন অ্যাক্টর’ শিরোপা দিয়ে বলেছিলেন, অভিনয় জগতে তিনি একটা যুগ। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে একটা থিয়েটারি ঢঙ ছিল। প্রথমে সেটি ভাঙেন প্রমথেশ বড়ুয়া। পরে যিনি অভিনয় শিল্পকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন অতীতের তাঁরায় সেই ‘ব্লু-ব্লাডেড অভিনেতা’ ছবি বিশ্বাস। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছবি বিশ্বাসের জন্মদিনে তাঁর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, “অভিনয়ের সময় তাঁর মতো ওইরকম রাজকীয় উপস্থিতি আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি। স্টুডিও বা মঞ্চের ক্ষেত্রে তাঁর সেই উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। ছ’ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতা, সুপুরুষ, গৌরবর্ণ, দাম্ভিক, হাবেভাবে সকলের থেকে আলাদা— এই সব তাঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে ছিল। অভিনয় শেখার জন্য যখন তাঁর কাছে সাহায্য চেয়েছি, দু’হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাইরের বহু লোকের ধারণা ছিল তিনি দাম্ভিক। কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। হয়তো উনি কোনও ব্যাপারে সাহায্য করেছেন, তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলে তিনি খুব আন্তরিক ভাবে জানাতেন এখন শেখার বয়স, এখন শেখার সময়, শিখে নাও”।