‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান/ বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান’ – ভারতবর্ষ বললে, প্রথমেই মাথায় আসে এই লাইনদুটি। কারণ এ দেশের মূল বৈশিষ্ট্য। বহুযুগ ধরেই বহুত্ববাদের দেশ ভারত। সম্প্রীতি রক্ষাই এখানকার ঐতিহ্য। তাই গেরুয়া শিবিরের ভাগাভাগির রাজনীতির মোকাবিলা করতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বৃহস্পতিবার রাজ্যের সরকার পক্ষ এবং বিরোধীদল এ বিষয়ে পৃথকভাবে দুটি প্রস্তাব আনে রাজ্য বিধানসভায়। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাও হয়। আলাদাভাবে এলেও আলোচনার শেষে দুটি প্রস্তাব যুক্ত করে বিধানসভায় গৃহীত হয়েছে বলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি একই, তাই সরকার পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দিল্লীতে প্রস্তাবটি পাঠান হবে।’ জানা গেছে, এতে খুশি সরকার ও বিরোধীপক্ষ উভয়েই।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুরুতেই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘গোটা দেশে ধর্মের নামে একটা বিভেদের রাজনীতি চলছে। এই বিভেদের রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে লড়ব। সামনে এগিয়ে চলার সময় এসেছে। যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে।’ মন্ত্রীর মতে, বাংলায় ঐতিহ্য-সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে এ রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। হোস পাইপের মতো অর্থ ছড়াচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পার্থর আর্জি, ‘বাংলার সংস্কৃতি গরিমাকে ধ্বংস করতে দেব না। আসুন সবাই একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। ময়দানে নামি। দেশের শান্তি-মৈত্রী- সম্প্রীতি অটুট রাখি।’ প্রস্তাবের ওপর পার্থ ছাড়াও পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কারিগরি প্রশিক্ষণ মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বক্তব্য রাখেন।
ফিরহাদ হাকিম বলেন, কে হিন্দু কে মুসলিম, মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি আমাদের ঐতিহ্য নয়। মৌলবাদীরা দেশ ভাঙার চক্রান্ত করছে। তিনি নিজে যে কালীপুজো, দুর্গাপুজোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত, সেটাও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। জয় শ্রীরাম বা আল্লা হো আকবর বলা অন্যায় নয়। তবে তা ধর্মীয় স্থানে বলা উচিত। কাউকে অপমান করার জন্য বলা উচিত নয়। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, জয় শ্রীরাম বলা যে বাংলার সংস্কৃতি নয়, সেটা একদম ঠিক বলেছেন অমর্ত্য সেন। আমাদের সংস্কৃতি বহুত্ববাদী। অন্যদিকে, কংগ্রেস ও বাম যৌথভাবে যে প্রস্তাবটি আনে, তাতে লোকসভা ভোটের পর সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে প্রাদেশিকতার বিষ ছড়ানোর উল্লেখ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের বক্তারা একযোগে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কড়া সমালোচনা করেন। জয় শ্রীরামকে রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করার তীব্র নিন্দা করেন।