ফের স্বপ্নভঙ্গ৷ ফের চার বছরের অপেক্ষা৷ গতকাল কোটি কোটি ভারতবাসী রুদ্ধশ্বাসে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন শেষপর্যন্ত৷ বিশ্বাস ছিল সকলেরই, বিরাটরা পারবেনই৷ কিন্তু গতকাল প্রথম থেকেই যেভাবে ধস নামল ভারতীয় টিমে সেখান থেকে দলকে তুলে আনার ক্ষমতা একা ধোনির ছিল কি!
গত পরশুর স্থগিত থাকা খেলা শুরু হতে যখন ২৩ বলে ২৮ তুলল কিউয়িরা তখনও অশনি সংকেত স্পষ্ট হয়নি৷ কিন্তু ভারতের ব্যাটিং শুরু হতে না হতেই প্যাভিলিয়নে যখন প্যাভিলিয়নে ফিরলেন রোহিত, যখন স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ৫ রানে ৩ উইকেট, বিপদ ঘিরে ধরেছে তখন তামাম ভারতবাসীকে৷ আর যার ফল কিউয়িদের ১৮ রানে জয়৷
গতকালের হারের পর প্রশ্ন উঠছে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে৷ যখন টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার তাসের ঘরের মত ভাঙছে তখন তা হলে ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে আগে আনা হল না কেন? পাঁচ রানে তিন উইকেট চলে যাওয়ার পরেই ধোনিকে নামিয়ে দিলে, ও আরও বল খেলতে পারত। ধোনি যদি কাল আরও ১০-১১টা বল বেশি খেলার সুযোগ পেত? এতে ভারত ও ধোনির রান যেমন বাড়ত, তেমনই ঋষভ ও হার্দিককে বিশাল অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করতে পারত।
কার্যত ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্ট ঝড় খুন করল ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। লিগে চতুর্থ হয়ে যে নিউজ়িল্যান্ড উঠে এসেছিল, তাদের কাছেই সেমিফাইনালে হারতে হল ১৮ রানে। মঙ্গলবার যখন বৃষ্টির কারণে ৪৬.১ ওভারে ২১১-৫ স্কোরবোর্ডে রেখে নিউজ়িল্যান্ড খেলা শেষ করেছিল, তখন এই ম্যাচে ভারত চালকের আসনে। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের ফিল্ডিং অন্যতম সেরা। আর সেই ফিল্ডিংই ছারখার করে দিল গোটা ভারতের প্রার্থনা৷
এই ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের নিউক্লিয়াসটা দুই জায়গায়। উপরের দিকে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি। আর মাঝের সারিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বাদ দিলে রোহিত সব ম্যাচেই শুরুতে ক্যাচ তুলে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে রোহিত সতর্ক হয়নি। এ দিন ম্যাট হেনরির দুর্দান্ত বলে টম লাথামকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যায় রোহিত। তার পরে কোহলি এসে নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়কের চালটা ধরতে পারেনি। বিরাট কোহলি অনসাইডে ভাল খেলে। পয়েন্ট আর থার্ডম্যান রাখেনি। তার পরে ট্রেন্ট বোল্ট ওকে শুরুর দিকে দু’টি বল বাইরের দিকে করে। তৃতীয় বল সামান্য ভেতরে আসে বিরাটের। চতুর্থ বলটা এমন ভয়ঙ্কর ভাবে উইকেটের দিকে ঢুকে আসে, যা বিরাট চকিতে বুঝতে না পেরেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যায়। তার কিছু পরেই কে এল রাহুল শিক্ষানবীশের মতো ব্যাট চালিয়ে নিউজ়িল্যান্ড উইকেটকিপার লাথামের হাতে ধরা পড়ে। ৩.১ ওভারের মধ্যে পাঁচ রানে তিন প্রথম সারির ব্যাটসম্যান ফিরে গিয়েছে। সেমিফাইনালের মতো এ রকম চাপের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে হলে, পাল্টা আক্রমণ করা উচিত ছিল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সেটা ওরা করল কোথায়? বরং এই সময় অতি সতর্ক হয়ে খেলতে গিয়ে স্কোরবোর্ডে রান তোলাটাই বন্ধ করে দিয়েছিল দীনেশ কার্তিক। ২৫ বল খেলে ৬ রান করেছে ও। বদলে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে দলে নেওয়া উচিৎ ছিল। তাই নিউজ়িল্যান্ডের আক্রমণে পাল্টা আক্রমণ না করার মাসুল গুনতে হয়েছে ভারতকে।
স্কোরবোর্ডে ২৩৯ রান নিয়ে লড়তে নেমে নিউজ়িল্যান্ড আক্রমণাত্মক হতই। শর্ট বল, বাউন্সার, সুইং করিয়ে আক্রমণাত্মক সেই ক্রিকেটটাই ওরা খেলেছে। ভারতীয় দল সেই ফাঁদেই পা দিয়ে শুরুতেই ম্যাচটা হাত থেকে বার করে দিয়েছিল। যেখান থেকে ফিরে আসতে পারেনি। শুধু ফিরে এল শূন্যতা৷ ফিরে এল প্যাভিলিয়নে আসার সময় ধোনির কান্না…