ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের হাজার হাজার বর্ণময় চরিত্রকে ‘কালাপানি’ পেরিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল সেলুলার জেলে। যাঁদের মধ্যে এক বড় অংশই ছিলেন বাঙালি বিপ্লবী। সুশীল সেন, যতীন্দ্রনাথ দাস, বারীন্দ্র ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত – তালিকা অনেক লম্বা। ছিলেন সুবোধ রায়, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর মতো চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের আগুনখেকো নায়করা। অথচ দ্বীপান্তরের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দামোদর সাভারকরকে। আন্দামানের বিমানবন্দরের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘বীর সাভারকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। উপেক্ষার অন্তরালে পাঠানো হচ্ছে অবিভক্ত বাংলার বিপ্লবীদের।
সারা দেশের মধ্যে সেলুলার জেলে নির্বাসিত বিপ্লবীদের মধ্যে সিংহভাগই ছিলেন বাঙালি। কিন্তু কেন্দ্রের মোদী সরকারের সাভারকর বন্দনা দেখে জানতে ইচ্ছে করে, এই সংখ্যাটা কত? কতজন বাঙালি বিপ্লবীকে দ্বীপান্তরে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যসভায় এই প্রশ্নটাই লিখিত আকারে জানতে চান নির্দল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানতে চান, ‘এটা সত্যি যে, সেলুলার জেলে অবিভক্ত বাংলার থেকেই সর্বাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে আন্দামানের সেলুলার জেলে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। যাঁদের দ্বীপান্তরিত করা হয়েছিল, রাজ্যভিত্তিক সেইসব বিপ্লবীদের তথ্য’।
এর উত্তরে সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, হ্যাঁ, অবিভক্ত বাংলা থেকেই সর্বাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে সেলুলার জেলে পাঠানো হয়েছিল। দ্য ডাইরেক্টরেট অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার, আন্দামান, নিকোবর প্রশাসনের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে, ১৯০৯-১৯৩৮সালের মধ্যে মোট ৫৮৫ জন বিপ্লবীকে সেলুলার জেলে পাঠানো হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ৩৯৮ জনই বাংলার।
এছাড়া রাজ্যভিত্তিক যে সব বিপ্লবীদের সেলুলার জেলে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে উড়িষ্যা থেকে ৫ জন, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ৮ জন, কেরালা থেকে ১৪ জন, উত্তর প্রদেশ থেকে ১৮ জন, বিহার থেকে ১৭ জন, মহারাষ্ট্র থেকে ৩ জন, পাঞ্জাব থেকে ৯৫ জন এবং হিমাচল/ উত্তর পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার/ তামিলনাড়ু ও নাম জানা যায়নি এমন রাজ্য থেকে সেলুলার জেলে পাঠানো বিপ্লবীদের সংখ্যা ২৭ জন।
ইতিহাসকে চেপে রাখা যায় না। সমস্ত শ্রদ্ধা রেখেও বলতেই হয়, যে সাভারকর মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, তাঁর থেকে ঢের ঢের বেশি কৃতিত্ব দাবি করেন উল্লাসকর দত্ত, বারীন্দ্র ঘোষেরা। ঋতব্রতর প্রশ্নের কেন্দ্রীয় উত্তর থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল। একই সঙ্গে বাংলাকে বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাসও সামনে এল।