হিন্দু ছাড়া কোন ধর্মকেই যে প্রাধান্য দেয় না গেরুয়া শিবির এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বারংবার৷ বিশেষত দলিত বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর মোদীর বিদ্বেষ সামনে এসেছে বহুবার৷ এবার খোদ মোদীর রাজ্য গুজরাতে উঁচু জাতের মেয়েকে বিয়ে করে খুন হতে হল দলিত যুবককে৷
সবকা সাথ সব কা বিকাশ’–এর স্লোগান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর রাজ্য গুজরাতে কিন্তু উল্টো ছবি। উঁচু জাতের মেয়েকে বিয়ে করার পর খুন হলেন দলিত যুবক হরীশ সোলাঙ্কি। অভিযোগ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। যুবকের পাশে দাঁড়িয়ে আক্রান্ত হলেন গুজরাত সরকারের ‘অভয়ম ১৮১’ হেল্প লাইনের কর্মীরা।
গুজরাতের আমেদাবাদ জেলার মণ্ডল তালুকের অন্তর্গত বারমোর গ্রামের ঘটনা। অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে একজন। বেপাত্তা ৭ জন।
আমেদবাদের ডেপুটি পুলিশ সুপার (এসসি/এসটি শাখা) পি ডি মানবর জানান, কচ্ছ জেলার গান্ধীধামের বাসিন্দা হরীশ। গুজরাটের কাদি শহরের আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স কলেজে পড়াশোনার সময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় আমেদাবাদের বারমোর গ্রামের মেয়ে ঊর্মিলাবেনের। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু ঊর্মিলাবেন উচ্চজাতের, দরবার সম্প্রদায়ভুক্ত। আর হরীশ দলিত। জাতপাতের কারণে বিয়েতে আপত্তি জানায় মেয়ের বাড়ির লোকজন। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও ছ’মাস আগে বিয়ে করেন তাঁরা। গান্ধীধামের বাড়িতে বউকে নিয়ে আসেন হরীশ।
সম্প্রতি গান্ধীধাম থেকে মেয়েকে বাড়িতে আনে ঊর্মিলাবেনের বাবা–মা। কয়েক সপ্তাহ পর মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে যাওয়ার আশ্বাস দেয় তারা। দু’মাস কেটে গেলেও তারা কথা না রাখায় স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বারমোরে যান হরেশ। স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য শ্বশুর–শাশুড়ির কাছে অনুরোধ করেন তিনি। অনুরোধে কর্ণপাত করেনি তারা। শেষে সোমবার রাতে ‘অভয়ম ১৮১’ মহিলা হেল্প লাইনের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের গাড়ি নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান হরেশ। হরেশকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে ঊর্মিলাবেনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যান হেল্প লাইনের কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে হরীশ এসেছে জানতে পেরেই চটে ওঠে ঊর্মিলাবেনের বাড়ির লোকজন। হরীশের ওপর চড়াও হয় তারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে হরীশের মাথায় ও শরীরের নানাস্থানে কোপ বসাতে শুরু করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান হরীশ।
হেল্প লাইনের গাড়ি ভাঙচুর করে আক্রমণকারীরা। রেয়াত করেনি হেল্প লাইন কর্মীদের। কোনও রকমে পালিয়ে যান সরকারি কর্মীরা। এই ঘটনায় মেয়ের বাবা–মা–সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন হেল্প লাইনের কর্মী বাভিকা ভাগোরা। সোমবার তিনি ছিলেন হরীশের সঙ্গে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪১, ৩৫৩, ১৪৭ ধারা এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে।